কেন এই ‘মনি মন্ডল’ এ অংশ গ্রহণ করব ?

সর্বপ্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে আমাদের গীতার বিষয়বস্তু জানা দরকার ।

ইসকনের মতো একটি আধ্যত্মিক সংগঠনে থেকে নিজেকে গঠন করার জন্য। 

গীতার বিষয়বস্তু যদি আমরা না জানি তাহলে ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োগ করার প্রশ্নই ওঠে না। 

আমরা ভাল প্রচারক হতে পারব না।

বাইরের লোক অনেক জানে কিন্তু আমরা যদি না জানি তাহলে কাদের প্রচার করব। 

কৃষ্ণকে স্মরণ করার জন্য একটি ভাল উপায়। 

গীতাকে জীবন্ত বলে গ্রহণ করার জন্য। 

ভগবদ্গীতার শিক্ষা নিজের জীবনে স্মার্টভাবে প্রয়োগ করার জন্য।


ভগবদ্ গীতা (সাধারণ পর্যালোচনা)

অধ্যায় -১৮ টি

অংশ - কর্ম, জ্ঞান ও ভক্তি        

 শ্লোক সংখ্যা-৭০০টি

সর্বমোট অনুচ্ছেদ-৮১টি

ভগবদ্ গীতায় সত্য - ৫টি (ঈশ^র, জীব, প্রকৃতি, কর্ম ও কাল)

ধৃতরাষ্ট্র-(১), সঞ্জয়-(৪০), অর্জুন (৮৫), শ্রীকৃষ্ণ (৫৭৪)। 



আঠারো অধ্যায়ের নাম মুখস্থ করার জন্য সবচেয়ে সহজ পন্থা :      


কর্ম

শ্লোক সংখ্যা

ভক্তি

শ্লোক সংখ্যা

জ্ঞান

শ্লোক সংখ্যা

১.   বি

৪৬

৭.   বি

৩০

১৩.   প্র

৩৫

২.  সা

৭২

৮.   অ

২৮

১৪.   গু

২৭

৩.  ক

৪৩

৯.   রা

৩৪ 

১৫.   পু

২০

৪.  জ্ঞা

৪২

১০.  বিভূ

৪২

১৬.   দৈ

২৪

৫.  কর্ম

২৯

১১.  বিশ^

৫৫

১৭.   শ্র

২৮

৬.  ধ্যা

৪৭

১২.  ভ

২০

১৮.   মো

৭৮














প্রথম অধ্যায় : 

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১. যুদ্ধের প্রস্তুতি

(১-১৩)

২. বিজয়সুচক লক্ষণ

(১৪-২০)

৩. কৃষ্ণের ভক্তবৎসল্যতা

(২১-২৭)

৪. অর্জুনের সন্দেহ

(২৮-৪৬)








প্রথম অধ্যায় :       লেসন : ১ :        যুদ্ধের প্রস্তুতি (১-১৩)


এক নজরে দেখুন :  এবং গল্পটি মনে রাখার চেষ্টা করুন।

 

শ্লোক ১ : ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়কে জিজ্ঞাসা করলেন

শ্লোক ২ - সঞ্জয় উত্তর প্রদান শুরু করলেন এবং দূর্যোধনের অবস্থা বর্ণনা শুরু করলেন-------

শ্লোক : ৩ : দূর্যোধন পান্ডবদের সৈন্য দর্শন করে দ্রোণকে বললেন

শ্লোক : ৪-৬ : পান্ডব পক্ষের সৈন্যদের বর্ণনা (নামসহ)

শ্লোক : ৭ : দূর্যোধন কর্তৃক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন

শ্লোক :৮-৯ : নিজের পক্ষের সৈন্যদের বর্ণনা

শ্লোক : ১০-১১ : দূর্যোধনের অহংকারের প্রকাশ এবং সেনাপতিদের আদেশ পিতামহকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য

শ্লোক : ১২ : দূর্যোধনের হর্ষ উৎপাদনের জন্য সিংহনাদে শঙ্খধ্বনি বাজালেন।

শ্লোক : ১৩ : তাকে অনুসরণ করে অন্যান্যরাও তাদের নিজ নিজ বাদ্যযন্ত্র বাজালেন। 



 




প্রথম অধ্যায় :    লেসন : ২   :  বিজয়সূচক লক্ষণ 


এক নজরে দেখুন   :  গল্পটি স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন


শ্লোক : ১৪ : দিব্য রথে বসে শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন তাদের দিব্য শঙ্খ বাজালেন

শ্লোক : ১৫-১৬ : পান্ডবদের ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শঙ্খের নাম উল্লেখ ও বাজালেন

শ্লোক : ১৭-১৮ : পান্ডব পক্ষের অন্যান্য যোদ্ধারা তাদের নিজ নিজ শঙ্খ বাজালেন কিন্তু নাম উল্লেখ হয় নাই। 

শ্লোক : ১৯ : সেই শঙ্খধ্বনি ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের হৃদয় বিদীর্ণ করল।

শ্লোক : ২০ : অর্জুন হনুমান চিহ্নিত পতাকা শোভিত রথে, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে শ্রীকৃষ্ণকে কিছু বলবেন--------












প্রথম অধ্যায় :   লেসন : ৩         :   কৃষ্ণের ভক্তবাৎসল্যতা  (২১-২৭)


এক নজরে দেখুন :       গল্পটি স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন


শ্লোক : ২১-২৩ : উভয় পক্ষের সৈন্যদের মাঝে রথ স্থাপন কর / আমি দেখতে চাই :

 ১. যুদ্ধ করার অভিলাষী হয়ে কারা এখানে এসেছে,  

 ২. এই মহাসংগ্রামে আমাকে কাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। এবং 

 ৩. ধৃতরাষ্ট্রের দুর্বুদ্ধিসম্পন্ন পুত্রদের সন্তুষ্ট করার বাসনায় এখানে কে এসেছে?

শ্লোক : ২৪-২৫ : সঞ্জয় বলছেন : শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের আদেশ পেয়ে রথটি উভয় পক্ষের মাঝখানে স্থাপন করলেন এবং অর্জুনকে সমস্ত কৌরবদের দেখতে বললেন।

শ্লোক : ২৬ : অর্জুন তাঁর আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের দেখলেন

শ্লোক : ২৭ : অর্জুন কৃপয়াবিষ্ট ও বিষন্ন হয়ে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন---------------------



প্রথম অধ্যায় :      লেসন -৪    :     অর্জুনের সন্দেহ (২৮-৪৬)


এক নজরে দেখুন : গল্পটি স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন।


শ্লোক : (২৮-৩০) :    প্রথম সন্দেহ :       (আত্মীয় স্বজনদের প্রতি করুণাপরবশতা)

শ্লোক : ( ৩১-৩৫):    দ্বিতীয় সন্দেহ :      (ইন্দ্রিয় উপভোগ)

শ্লোক : (৩৬-৩৮) :   তৃতীয় সন্দেহ :       (পাপ প্রতিক্রিয়া ভয়)

শ্লোক : (৩৯-৪৩) :    চতুর্থ সন্দেহ :       (বংশের ঐতিহ্য ধ্বংস হওয়া)

শ্লোক : (৪৪-৪৫) : অজুর্ন নিজেকে ধিক প্রদান করলেন।

শ্লোক : ৪৬ : সঞ্জয় আবার বললেন। 



 



দ্বিতীয় অধ্যায় 

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১. অর্জুনের অধিক সন্দেহ ও শরণাগতি

(১-১০)

২. জ্ঞান-যুদ্ধ!! আত্মার কোন মৃত্যু নেই

(১১-৩০)

৩. কর্মকান্ড---যুদ্ধ!!! নির্ধারিত কর্তব্যের দ্বারা জাগতিক উপভোগ

(৩১-৩৮)

৪. বুদ্ধিযোগ----যুদ্ধ!!! কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়াবিহীন 

(৩৯-৫৩)

৫. স্থিতপ্রজ্ঞ---যুদ্ধ!!! কৃষ্ণভাবনায় স্থিত হওয়া

(৫৪-৭২)











দ্বিতীয় অধ্যায়  :    লেসন -১    :       অর্জুনের অধিক সন্দেহ ও শরণাগতি    (১-১০)


এক নজরে দেখুন :        গল্পটি মনে রাখার চেষ্টা করুন 


শ্লোক ১ :  সঞ্জয় বললেন :  অনুতপ্ত, ব্যাকুল ও অশ্রুসিক্ত দেখে শ্রীকৃষ্ণ বললেন..............

শ্লোক ২ :  ভগবান বললেন : কোথা থেকে অনার্যদের মতো শোক আসল। এটি তোমাকে স্বর্গেও নিয়ে যাবে না, আর সমস্ত যশরাশি নষ্ট করবে।

শ্লোক ৩ :  ভগবান বললেন : সম্মান হানিকর ক্লীবত্বের বশীভূত হয়ো না। হৃদয়ের ক্ষুদ্র দুর্বলতা পরিত্যাগ কর।

শ্লোক ৪ : অর্জুন বললেন : ভীষ্ম ও দ্রোণের মতো পূজনীয় ব্যক্তিকে কিভাবে বানের দ্বারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব ?

শ্লোক ৫ : এতের হত্যা করার চেয়ে ভিক্ষা করা ভাল। যুদ্ধলব্ধ সমস্ত বস্তু এদের রক্তমাখা হবে।

শ্লোক ৬ : তাদের জয় করা শ্রেয় না তাদের দ্বারা পরাজিত হওয়া শ্রেয় আমি বুঝতে পারছি না

শ্লোক ৭ : আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় এবং তোমার শরণাগত। আমি এখন তোমার শিষ্য দয়া করে আমাকে জ্ঞান দাও। 

শ্লোক ৮ : ইন্দ্রিয় গুলিয়ে শুকিয়ে দিচ্ছে যে শোক তা দূর করার উপায় খুজেঁ পাচ্ছি না । দেবতাদের মতো সৃমৃদ্ধিশালী, প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন রাজ্য পেলেও এই শোকের বিনাশ হবে না। 

শ্লোক ৯ : সঞ্জয় বললেন : এই মনোভাব ব্যক্ত করে অর্জুন হৃষীকেশকে বললেন, “আমি যুদ্ধ করব না”, 

শ্লোক ১০ : সঞ্জয় বললেন : শ্রীকৃষ্ণ স্মিত হেসে উভয় পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে অর্জুনকে এই কথা গুলো বললেন। 




























দ্বিতীয় অধ্যায় :      লেসন :  ২    :       জ্ঞান-------আত্মার মৃত্যু নেই  


এক নজরে দেখুন :    গল্পটি মুখস্ত করার চেষ্টা করুন


শ্লোক  ১১ :  ভগবান বললেন : ভগবান অর্জুনকে তিরষ্কার করলেন 

শ্লোক  ১২ : আমি, তুমি এবং এই সমস্ত রাজারা পূর্বে ছিলাম, এখন আছি এবং ভবিষ্যতে থাকব। 

শ্লোক ১৩ :  দেহের মতো আত্মাও এক দেহ থেকে আরেক দেহে দেহান্তরিত হয়। পন্ডিত ব্যক্তি তাতে শোক করেন না। 

শ্লোক ১৪ : সুখ এবং দুঃখ হচ্ছে শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুর গমনাগমনের মতো, তা সহ্য কর। 

শ্লোক ১৫ : যিনি এভাবে করেন তিনি মুক্তি লাভের যোগ্য।

শ্লোক ১৬ : তত্ত্বদ্রষ্টার সিদ্ধান্ত  (নিত্য বস্তুর বিনাশ নেই আর অনিত্য বস্তুর স্থায়িত্ব নেই )

শ্লোক ১৭ : সমগ্র শরীরে ব্যপ্ত অবিনাশী আত্মাকে কেউ বিনাশ করতে পারে না।

শ্লোক ১৮ : অবিনাশী, অপরিমেয়, শাশ^ত আত্মার জড় দেহ নিঃসন্দেহে বিনাশশীল। অতএব যুদ্ধ কর।

শ্লোক ১৯ : আত্মা কাউকে হত্যা করে না বা কারো দ্বারা নিহতও হয় না, এটি যিনি জানেন না তিনি আত্মার স্বরূপ জানেন না। 

শ্লোক ২০-২৫ : আত্মার বৈশিষ্ঠ্য :

২০ : আত্মার জন্ম হয় না বা মৃত্যু হয় না / পুনঃ পুনঃ তাঁর উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না/ জন্মরহিত, শাশ^ত, নিত্য এবং পুরাতন হলেও চিরনবীন/ শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনও বিনষ্ট হয় না।

২১ : যিনি আত্মাকে এইভাবে জানেন তিনি কাউকে হত্যা করতে পারেন না।

২২ : আত্মা জীর্ণ শরীর পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, পোশাক পরিবর্তনের মতো 

২৩-২৫ : 

অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না/ 

আগুণে পোড়ানো যায় না/ 

জলে ভেজানো যায় না / 

হাওয়াতে শুকানো যায় না/

অচ্ছেদ্য, অদাহ্য, অক্লেদ্য ও অশোষ্য/ চিরস্থায়ী/ সর্বব্যাপ্ত/ অপরিবর্তনীয়/ অচল/ সনাতন/ অব্যক্ত , অচিন্ত্য ও অবিকারী  

শ্লোক ২৬ : তুমি যদি মনে কর আত্মার বারবার জন্ম ও মৃত্যু হয়, তারপরেও শোক করা উচিত নয়

শ্লোক ২৭ : যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যুও অবশ্যম্ভাবী, যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী, অপরিহার্য কর্তব্য সম্পাদনে শোক করো না। 

শ্লোক ২৮ : সৃষ্টির পূর্বে জীবসকল অপ্রকাশিত ছিল, স্থিতিকালে প্রকাশিত এবং বিনাশের পর অপ্রকাশিত হবে। শোক করো না।

শ্লোক ২৯ : আত্মাকে কেউ আশ্চর্যবৎ দর্শন করেন, আশ্চর্যভাবে বর্ণনা করেন, আশ্চর্য জ্ঞানে শ্রবণ করেন, আর কেউ শুনেও বুঝতে পারে না। 

শ্লোক ৩০ : প্রাণীদের দেহে অবস্থিত আত্মা সর্বদাই অবধ্য। তাই কোন জীবের জন্য শোক করা উচিত নয়। 




দ্বিতীয় অধ্যায় :     লেসন : ৩     :    কর্মকান্ড---যুদ্ধ! জাগতিক উপভোগ (৩১-৩৮)


এক নজরে দেখুন : গল্পটি মুখস্ত করার চেষ্টা করুন।


শ্লোক ৩১-৩৮ : 

৩১ : ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ, এটি সবচেয়ে মঙ্গল জনক। 

৩২ : এটি স্বর্গ দ্বার উন্মোচনকারী । 

৩৩ :যুদ্ধ না করলে স্বীয় ধর্ম ও কীর্তি থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পাপ ভোগ করবে। 

৩৪ : সমস্ত লোক কীর্তিহীনতার কথা বলবে, তা থেকে মৃত্যু শ্রেষ্ঠ। 

৩৫ : তারা মনে করবে যে তুমি যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গেছ এবং তারা তোমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য জ্ঞান করবে। 

৩৬ : অকথ্য কথা বলবে

৩৭ : নিহত হলে স্বর্গ লাভ হবে আর জয়ী হলে পৃথিবী ভোগ করবে।

৩৮ : সুখ ও দুঃখ, জয়-পরাজয় ও লাভ ক্ষতিকে সমান জ্ঞান করে যুদ্ধ করলে আর পাপের ভাগীদার হতে হবে না।  






দ্বিতীয় অধ্যায় :      লেসন  ৪       :       বুদ্ধিযোগ ( কোন প্রতিক্রিয়া বিহীন )  (  ৩৯-৫৩)


এক নজরে দেখুন   :       গল্পটি স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন   


শ্লোক ৩৯-৫৩ : 

৩৯-বুদ্ধিযোগ সম্বন্ধে শুন, যার দ্বারা কর্ম বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে

৪০-এই অনুশীলন কখনও ব্যর্থ হয় না, স্বল্প অনুষ্ঠানও অনুষ্টাতাকে সংসাররূপ মহাভয় থেকে পরিত্রাণ করে।

৪১-যারা ভক্তিযোগ অনুশীলন করে তাদের বুদ্ধি একনিষ্ঠ, আর যারা এই পথ অবলম্বন করে না তাদের বুদ্ধি বহু শাখা বিশিষ্ট  ও বহুমুখী।

৪২ ও ৪৩-বিবেক বর্জিত লোকেরাই বেদের বিচিত্র ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হয়।

৪৪-যারা ভোগ ও ঐশ^র্যসুখে আসক্ত, তাদের বুদ্ধি কখনো ভগবানে একনিষ্ঠতা লাভ হয় না। 

৪৫-বেদ ত্রিগুণ নিয়ে আলোচনা করে , হে অর্জুন তুমি ত্রিগুণাতীত হও। 

৪৬-ভক্তিযোগের মাধ্যমে অন্য সব যোগের উদ্দেশ্য সাধিত হয়, উদা: ক্ষুদ্র জলাশয় ও বৃহৎ জলাশয়

৪৭-কর্মে তোমার অধিকার, ফলে তোমার অধিকার নেই।

৪৮-ভক্তিযোগস্থ হয়ে স্বধর্ম বিহিত কর্ম আচরণ কর।

৪৯-বুদ্ধিযোগ দ্বারা ভক্তির অনুশীলন কর, সকাম কর্ম থেকে দূরে থাক, ভগবানের শরণাগত হও। যারা তাদের কর্মের ফল ভোগ করতে চায় তারা কৃপণ। 

৫০-যিনি ভগবদ্ভক্তি অনুশীলন করেন তিনি এই জীবনেই পাপ ও পুণ্য উভয় থেকেই মুক্ত হন। 

৫১-মনীষীগণ এভাবেই করেছেন। 

৫২-হে অর্জুন ! নিষ্কাম কর্ম অভ্যাস করতে করতে বুদ্ধি মোহ থেকে মুক্ত হবে, তখন যা শুনেছ, শ্রবণীয় সবকিছুর প্রতি নিরপেক্ষ হতে পারবে। 

৫৩-যখন তোমার বুদ্ধি  বেদের বিচিত্র ভাষার দ্বারা বিচলিত হবে না তখন তুমি দিব্য জ্ঞান লাভ করে ভক্তিযোগে অধিষ্ঠিত হবে।  







দ্বিতীয় অধ্যায় :        লেসন : ৫      :         স্থিতপ্রজ্ঞ (৫৪-৭২)


এক নজরে দেখুন   :    গল্পটি স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন।


শ্লোক ৫৪ : অর্জুনের প্রশ্ন :  স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির লক্ষণ কি?  তিনি কিভাবে কথা বলেন ? কিভাবে অবস্থান করেন ? কিভাবে তিনি বিচরণ করেন? 

শ্লোক ৫৫ : ভগবান উত্তর প্রদান করছেন : 

স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির লক্ষণ : 

মনোগত কাম পরিত্যাগ করেন যা মানসিক জল্পনা কল্পনা থেকে উদ্ভুত

আত্মাতেই পূর্ণ পরিতৃপ্তি লাভ করে

শ্লোক ৫৬-৫৭ : 

তিনি কিভাবে কথা বলেন, উত্তর : 

ত্রিতাপ দুঃখের উপস্থিতিতে যার মন উদ্বিগ্ন হয় না

সুখ উপস্থিত হলে স্পৃহা হয় না

রাগ, ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত

জড় বিষয়ে আসক্তিরহিত

প্রিয় বস্তু লাভে আনন্দিত হন না

অপ্রিয় বিষয় উপস্থিত হলে দ্বেষ করেন না

তিনি পূর্ণজ্ঞানে অধিষ্ঠিত

শ্লোক ৫৮-৫৯ :

তিনি কিভাবে অবস্থান করেন ? 

৫৮-তিনি কূর্মের মতো ইন্দ্রিয়গুলিকে ইন্দ্রিয় বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন।

তিনি চিন্ময় জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত।

৫৯-উচ্চতর স্বাদ আস্বাদন করার ফলে চিরতরে বিষয়তৃষ্ণা থেকে বিরত হন।

শ্লোক ৬০-৬৩ : কৃষ্ণভাবনায় উচ্চতর স্বাদ আস্বাদন করার গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।

৬০ : ইন্দ্রিয়সমূহ অত্যন্ত বলবান এবং ক্ষোভকারী, অতি যতœশীল বিবেকসম্পন্ন পুরুষের মনকেও বলপূর্বক বিষয়ের দিকে হরণ করে।

৬১ : যিনি উত্তমা ভক্তিপরায়ণ হয়ে তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পূর্ণরূপে বশীভূত করেছেন, তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ।

৬২-৬৩ : কিভাবে ইন্দ্রিয়গুলো অধঃপতিত হয়, তার প্রক্রিয়া হচ্ছে :

বিষয়ের চিন্তা-----আসক্তি জন্মে----কাম-------ক্রোধ-------সম্মোহ-------স্মৃতিবিভ্রম-----বুদ্ধিনাশ------সর্বনাশ।

 শ্লোক ৬৪-৭১ : তিনি কিভাবে বিচরণ করেন

৬৪----প্রিয় বস্তুতে আসক্তি ও অপ্রিয় বস্তুতে বিদ্বেষ থেকে মুক্ত, বশীভূত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা ভগবদ্ভক্তির অনুশীলন করে

৬৫----চিন্ময় চেতনায় অধিষ্ঠিত হলে ত্রিতাপ দুঃখ থাকে না। প্রসন্নতা লাভ করার ফলে বুদ্ধি শীঘ্রই স্থির হয়।

৬৬----যে কৃষ্ণভাবনায় যুক্ত নয়, তার চিত্ত সংযত নয়, পরমার্থ চিন্তাশূন্য ব্যক্তির শান্তি ও সুখ লাভের সম্ভাবনা নেই

৬৭----প্রতিকূল বায়ুর ন্যায় একটি মাত্র ইন্দ্রিয়ের আকর্ষণেও মন অসংযত ব্যক্তির প্রজ্ঞাকে হরণ করে।

৬৮----যার ইন্দ্রিয় বিষয় থেকে নিবৃত্ত হয়েছে, তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ।

৬৯----সমস্ত জীবের জন্য যা রাত, স্থিতপ্রজ্ঞ সেই রাতে জেগে থেকে সাক্ষাৎ আনন্দকে অনুভব করে। 

৭০----বিষয়কামী ব্যক্তি শান্তি লাভ করে না। জলরাশি যেমন সমুদ্রকে ক্ষোভিত করতে পারে না, কামসমূহও স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিকে বিক্ষুব্ধ করতে পারে না। 

৭১----যে ব্যক্তি সমস্ত কামনা বাসনা পরিত্যাগ করে জড় বিষয়ের প্রতি নিস্পৃহ, নিরহঙ্কার ও মমত্ববোধ রহিত হয়ে বিচরণ করে তিনিই প্রকৃত শান্তি লাভ করেন। 

শ্লোক ৭২ : এই ধরণের স্থিতিই হচ্ছে ব্রাহ্মীস্থিতি। যিনি এই স্থিতি লাভ করেন তিনি মোহ গ্রস্থ হন না। জীবনের অন্তিম সময়ে এই স্থিতি লাভ করে তিনি জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে ভগবৎ ধামে প্রবেশ করেন। 







তৃতীয় অধ্যায় 

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১. কর্মত্যাগ অথবা ভক্তিযুক্ত কর্ম 

(১-৯)

২. কর্মকান্ড থেকে কর্মযোগ

(১০-১৬)

৩. কর্মযোগ-দৃষ্টান্তস্থাপনের জন্য অনাসক্ত হয়ে কর্ম করা

(১৭-৩৫)

৪. কাম ও ক্রোধ থেকে সতর্ক থাকা 

(৩৬-৪৩)




তৃতীয় অধ্যায় :        লেসন-১      : কর্মত্যাগ অথবা ভক্তিযুক্ত কর্ম (১-৯)


এক নজরে দেখুন :             গল্পটি মনে রাখুন   : 


শ্লোক ১ :    অর্জুন বলছেন : ভক্তি যোগ যদি শ্রেষ্ঠ হয় তাহলে আমাকে যুদ্ধে প্ররোচিত করছ কেন?

শ্লোক : ২ :  অর্জুন বলছেন : তুমি আমাকে বিভ্রান্ত করছ, নিশ্চিত ভাবে বল কোনটি শ্রেষ্ঠ আমার জন্য।

শ্লোক : ৩ : ভগবান বলছেন : দুই ধরণের ব্যক্তি আত্মোপলব্ধি করে।  দার্শনিক জ্ঞানের আলোচনার মাধ্যমে, ও ভক্তির মাধ্যমে ।

শ্লোক : ৪ :  ভগবান বলছেন : কর্ম না করেও ফল থেকে মুক্ত হওয়া যায় না, আবার কর্মত্যাগ করেও সিদ্ধি লাভ করা যায় না।

শ্লোক : ৫ : ভগবান বললেন : মায়াজাত গুণসমূহের প্রভাবে সকলেই অসহায় ভাবে কর্ম করতে বাধ্য, কেউ ক্ষণকালও কর্ম না করে থাকতে পারে না।

শ্লোক : ৬ : ভগবান বললেন : মিথ্যাচারী ভন্ড (প -ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ করে মনে মনে আস্বাদন)

শ্লোক : ৭ : ভগবান বললেন : যিনি মনের দ্বারা ইন্দ্রিয় সংযম করেন এবং কর্মযোগের অনুষ্ঠান করে, ভন্ড থেকে শ্রেষ্ঠ। 

শ্লোক : ৮ : ভগবান বলছেন : কর্ম কর, কর্মত্যাগ থেকে কর্ম করা শ্রেয়। দেহযাত্রার জন্য হলেও কর্ম করতে হবে।

শ্লোক : ৯ : ভগবান বলছেন : বিষ্ণুর প্রীতি বিধানের জন্য কর্ম কর, তা না হলে কর্ম বন্ধনের কারণ, করলে বন্ধন মুক্ত হবে। 












তৃতীয় অধ্যায় :        লেসন-২      :  কর্মকান্ড থেকে কর্মযোগ (১০-১৬)


এক নজরে দেখুন :             গল্পটি মনে রাখুন   : 


শ্লোক : ১০ : সৃষ্টির শুরুতে যজ্ঞসহ প্রজা সৃষ্টি হয়েছিল এবং এই যজ্ঞ সমস্ত অভীষ্ট পূর্ণ করবে

শ্লোক : ১১ : যজ্ঞে সন্তুষ্ট হয়ে দেবতারা প্রীতি সাধন করবে এবং তোমরা পরম মঙ্গল লাভ করবে

শ্লোক : ১২ :  চোর (যারা দেবতাদের প্রদত্ত বস্তু তাদের না দিয়ে খায়)

শ্লোক : ১৩ : ভগবদ্ভক্ত সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়, আর যারা নিজেদের জন্য রান্না করে তারা কেবল পাপ ভোজন করে।

শ্লোক : ১৪-১৫ :    প্রাণীদের জীবন ধারণের ভরসা হচ্ছে অন্ন ---------বৃষ্টি---------------যজ্ঞ-------শাস্ত্রোক্ত কর্ম থেকে----বেদ থেকে ----------পরমেশ^র ভগবান থেকে । অতএব ব্রহ্ম সর্বদা যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত । 

শ্লোক : ১৬ :  যারা বেদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যজ্ঞ অনুষ্ঠানের পন্থা অনুসরণ করেনা, সে সকল ইন্দ্রিয়সুখ পরায়ণ পাপী বৃথা জীবন ধারণ করে । 





এই জগতে যখন আমাদের পাঠানো হয়েছে তখন এখানে আমরা কিসের জন্য কি করব তাও সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু যারা এটি অনুসরণ করে না তারা হচ্ছে..











আমরা এখন দ্বিতীয় লেসন নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি, একটু ভেবে দেখুন “ কর্মকান্ড থেকে কিভাবে কর্মযোগ হয়” 

















তৃতীয় অধ্যায় :        লেসন-৩      :  কর্ম যোগ - দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য অনাসক্ত হয়ে কর্ম করা  (১৭-৩৫)


এক নজরে দেখুন :             গল্পটি মনে রাখুন   : 


শ্লোক : ১৭ : যার কোন কর্তব্যকর্ম নেই : 

যে ব্যক্তি আত্মাতেই প্রীত, আত্মাতেই তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট, 

তার কোন কর্তব্যকর্ম নেই

শ্লোক : ১৮ : আত্মানন্দ ব্যক্তি : 

আত্মানন্দ ব্যক্তির এই জগতে ধর্ম অনুষ্ঠানেরও প্রয়োজন নেই, 

কর্ম না করারও কোন কারণ নেই। 

কারণ তাকে কারো উপর নির্ভর করতে হয় না।

শ্লোক : ১৯ : কর্মফল ত্যাগ : 

ফলের প্রতি আসক্তিরহিত হয়ে কর্ম কর। 

তাহলে পরমতত্ত্বকে লাভ করবে।

শ্লোক : ২০ : জনশিক্ষার জন্য কর্ম : 

জনকাদি রাজারা কর্মের দ্বারাই সংসিদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছেন এবং 

জনসাধারণকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তোমার কর্ম করা উচিত।

শ্লোক : ২১ : শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির অনুসরণ : 

কারণ সবাই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির অনুকরণ ও অনুসরণ করে।

শ্লোক : ২২-২৪ : ভগবান কেন কর্ম করেন :  

২২-এই জগতে আমার কিছুই কর্তব্য নেই, প্রাপ্তব্য ও অপ্রাপ্ত কিছু নেই। তারপরও আমি কর্ম করি।

২৩-কারণ আমি কর্মে প্রবৃত্ত না হলে, সমস্ত লোকেরা আমাকে অনুসরণ করে কর্ম ত্যাগ করবে।

২৪-সমস্ত লোক উৎসন্নে হবে। আমি বর্ণসংকর সৃষ্টি কারণ হব ও আমার দ্বারা সমস্ত প্রজা বিনষ্ট হবে।

শ্লোক : ২৫-২৯ : জ্ঞানীর কর্ম ও অজ্ঞানীর কর্ম :  

২৫-অজ্ঞানীরা ফলের প্রতি আসক্ত হয়ে কর্ম করে। আর জ্ঞানীরা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য কর্ম করে।

২৬-জ্ঞানবান ব্যক্তিরা অজ্ঞানীদের বুুদ্ধি বিভ্রান্ত করবে না। ভক্তিযুক্ত চিত্তে কর্ম অনুষ্ঠান করবেন এবং জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের কর্মে প্রবৃত্ত করবেন। 

২৭-প্রকৃতির কার্যকে নিজের কার্য বলে আমি কর্তা অভিমান করে।

২৮-তাই তত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তি সকাম কর্ম ও ভগবদ্মুখী কর্মের পার্থক্য জানেন, তাই ইন্দ্রিয় ভোগাত্মক কার্যে প্রবৃত্ত হন না। 

২৯-গুণের দ্বারা মোহাচ্ছন্ন হয়ে অজ্ঞানী ব্যক্তিরা জাগতিক কার্যকলাপে প্রবৃত্ত হয়। তত্ত্বজ্ঞানী পুরুষেরা তাদের কর্ম নিকৃষ্ট  হলেও মন্দবুদ্ধি ও অল্পজ্ঞ ব্যক্তিগণকে বিচলিত করেন না।

শ্লোক : ৩০ : প্রকৃত কর্মকৌশল :  

অধ্যাত্মচেতনা-সম্পন্ন হয়ে সমস্ত কর্ম আমাকে সমর্পণ কর, 

মমতাশুন্য, নিষ্কাম ও শোকশুন্য হয়ে যুদ্ধ কর।





শ্লোক : ৩১ : আশীর্বাদ :  যারা শ্রদ্ধাবান ও মাৎসর্যরহিত হয়ে এই উপদেশ অনুসরণ করে, তারা কর্ম বন্ধন থেকে মুক্ত হন। 

শ্লোক : ৩২ : অভিশাপ : 

কিন্তু যারা অসূয়াপূর্বক এই উপদেশ পালন করেনা, তাদের সমস্ত জ্ঞান থেকে বি ত, বিমূঢ় এবং পরমার্থ লাভের প্রচেষ্টা ভ্রষ্ট বলে জানবে। 

শ্লোক : ৩৩  : কর্ম ত্যাগ করে কোন লাভ নেই : 

জ্ঞানবান ব্যক্তিও তার স্বভাব অনুসারে কার্য করেন, প্রত্যেকেই ত্রিগুণজাত স্বীয় স্বভাবকে অনুগমন করে। নিগ্রহে কি লাভ?

শ্লোক : ৩৪ : পারমার্থিক পথের প্রতিবন্ধক : 

সকলেই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ে আসক্তি অথবা বিরক্তি অনুভব করে, 

কিন্তু এভাবে ইন্দ্রিয় ও ইন্দ্রিয় বিষয়ে বশীভূত হওয়া উচিত নয়, তা পারমার্থিক পথের প্রতিবন্ধক। 

শ্লোক : ৩৫ : স্বধর্ম শ্রেষ্ঠ : 

স্বধর্ম দোষযুক্ত হলেও পরধর্ম থেকে শ্রেষ্ঠ, 

মৃত্যু হলেও মঙ্গলজনক, 

কিন্তু অন্য ধর্ম চর্চা বিপদজনক। 






















তৃতীয় অধ্যায় :        লেসন :   ৪         :   শ্লোক (৩৬-৪৩)


এক নজরে গল্পটি দেখুন :       স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন


শ্লোক ৩৬ : অর্জুনের প্রশ্ন : মানুষ কার দ্বারা পরিচালিত হয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও পাপ করে।

শ্লোক ৩৭ : ভগবান উত্তর প্রদান করবেন : 

রজোগুণ থেকে সমুদ্ভুত কাম,  

এই কাম ক্রোধে পরিণত হয়। 

সর্বগ্রাসী ও পাপাত্মক । 

জীবের প্রধান শত্রু।


শ্লোক ৩৮ : যেভাবে জীবকে আবৃত করে : 

ধূমের দ্বারা অগ্নি যেমন : মানুষ

ময়লার দ্বারা দর্পণ যেমন : পশু-পাখিরা 

জরায়ুর দ্বারা গর্ভ যেমন : কীটপতঙ্গ ও বৃক্ষ লতাদি।


শ্লোক ৩৯ :  কামের বৈশিষ্ট্য :  

এই চির শত্রুর দ্বারা শুদ্ধ চেতনা আবৃত হয়

এই কাম দূর্বারিত অগ্নির মতো চির অতৃপ্ত। 


শ্লোক ৪০ : কামের আশ্রয়স্থল : 

ইন্দ্রিয়সমূহ, মন ও বুদ্ধি 

এগুলির দ্বারা কাম প্রকৃত জ্ঞানকে আচ্ছন্ন করে।


শ্লোক ৪১ : কাম বিনাশের সূত্র : 

ইন্দ্রিয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণের দ্বারা (কারণ এটি জ্ঞান ও বিজ্ঞাননাশক, পাপের প্রতীকরূপ)


শ্লোক  ৪২ : আত্মা সবার থেকে শ্রেষ্ঠ (জড় পদার্থ-----ইন্দ্রিয়শ্রেষ্ঠ------মন শ্রেষ্ঠ----------বুদ্ধি শ্রেষ্ঠ----------আত্মা শ্রেষ্ঠ।)

শ্লোক  ৪৩ :  নিশ্চয়াত্মিক বুদ্ধি ও চিৎ-শক্তির দ্বারা এই দূর্জয় শত্রুকে জয় কর।










চতুর্থ অধ্যায় : জ্ঞান যোগ 


বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১. কৃষ্ণ সম্পর্কিত জ্ঞান 

(১-১০)

২. বর্ণাশ্রমের উদ্ভাবক ও সমস্ত পথের লক্ষ্য হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ

(১১-১৫)

৩. কর্মযোগ

(১৬-২৪)

৪. যজ্ঞ চিন্ময় জ্ঞানের দিকে পরিচালিত করে 

(২৫-৩৩)

৫. চিন্ময় জ্ঞানের সারাংশ

(৩৪-৪২)




































চতুর্থ অধ্যায় :       লেসন : ১        :         কৃষ্ণ সম্পর্কিত জ্ঞান (১-১০) 


এক নজরে দেখুন  :          গল্পটি   স্মরণ   রাখার চেষ্টা করুন।


শ্লোক  : ১  : জ্ঞান প্রবাহ ----সূর্যদেব বিবস্বানকে------মনুকে------ইক্ষ¦াকুকে বলেছিলেন।

শ্লোক : ২ :  পরাম্পরা স্থাপন : পরম্পরার মাধ্যমে এই জ্ঞান রাজর্ষিরা লাভ করেছিলেন, যা কালের প্রভাবে ছিন্ন হয়েছিল এবং তা নষ্টপ্রায়।

শ্লোক : ৩ : গূঢ় রহস্য হৃদয়ঙ্গমের সূত্র : আজ আমি তোমাকে বলছি, যেহেতু তুমি আমার ভক্ত ও সখা, তাই এই বিজ্ঞানের অতি গূঢ় রহস্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে।

শ্লোক : ৪ : অর্জুনের প্রশ্ন :  সূর্যদেব তোমার অনেক আগে জন্ম হয়েছে, কিভাবে বুঝব যে তুমি তাকে জ্ঞান দিয়েছিল?

শ্লোক : ৫ : ভগবান উত্তর প্রদান করলেন : 

আমার ও তোমার বহু জন্ম অতীত হয়েছে

আমি তা স্মরণ করতে পারি কিন্তু তুমি তা পারনা। 

শ্লোক : ৬ :  ভগবান নিজেই নিজের সম্বন্ধে  বলছেন : 

আমি জন্মরহিত

আমার চিন্ময় দেহ অব্যয়

আমি সর্বভূতের ঈশ^র

আমি চিন্ময় রূপে অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে যুগে যুগে অবতীণ হই

শ্লোক : ৭-৮ : আবির্ভাবের কারণ : 

যখন ধর্মের অধঃপতন হয়, এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়

সাধুদের পরিত্রাণ ও দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য

এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য

শ্লোক : ৯ : ভগবানের দিব্য জন্ম ও কর্ম :  

যথাযথভাবে জানলে পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হয় না

তিনি নিত্য ধাম লাভ করেন। 

শ্লোক : ১০ : পূর্বে বহু লোক ভগবানের জ্ঞান লাভ করে পবিত্র হয়েছে : 

আসক্তি, ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত হয়ে

আমাতে মগ্ন হয়ে 

একান্তভাবে আমার আশ্রিত হয়ে 

আমার অপ্রাকৃত প্রীতি লাভ করেছে। 



 














চতুর্থ অধ্যায় :     লেসন   :   ২          :   বর্ণাশ্রমের উদ্ভাবক ও সমস্ত পথের লক্ষ্য হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ (১১-১৫)


এক নজরে দেখুন এবং তা স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন 


শ্লোক : ১১ :  ভগবানের আদান প্রদান সূত্র :  যে যেভাবে আত্মসমর্পণ করে, আমি সেভাবে তাদেরকে পুরুষ্কৃত করি। সকলেই আমার পথ অনুসরণ করে। 

শ্লোক : ১২ : দেব উপাসনার কারণ : সকাম কর্মের সিদ্ধি কামনা করে মানুষ দেব-দেবীদের উপাসনা করে। সকাম কর্মের ফল শীঘ্রই লাভ হয়।

শ্লোক : ১৩ : কৃষ্ণ বর্ণাশ্রমের সৃষ্টিকর্তা : প্রকৃতির ত্রিগুণ ও কর্ম অনুসারে চারটি বর্ণবিভাগ আমি সৃষ্টি করেছি। তথাপি আমাকে অকর্তা এবং অব্যয় বলে জানবে। 

শ্লোক : ১৪ :  কর্মের সাথে কৃষ্ণের সম্বন্ধ :  

 কোন কর্মই তাকে প্রভাবিত করতে পারে না।

এবং তিনি কোন কর্মফলের আকাঙ্কা করেন না।

এ তত্ত্ব যিনি জানেন তিনি সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ হন না।

শ্লোক : ১৫ : সমস্ত মুক্ত পুরুষেরা আমার তত্ত্ব অবগত হয়ে কর্ম করেছে, তুমিও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ কর।


























চতুর্থ অধ্যায় :     লেসন :  ৩  :       কর্মযোগ  (১৬-২৪)  


এক নজরে দেখুন এবং তা স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন


শ্লোক  : ১৬ :  বিবেকী ব্যক্তিদের মোহিতকারী উপদেশ : 

কর্ম কাকে বলে, ও অকর্ম কাকে বলে

এটি জানলে তুমি সমস্ত অশুভ অবস্থা থেকে মুক্ত হবে।

শ্লোক : ১৭ : কর্মের নিগূঢ় তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করা অত্যন্ত কঠিন : 

 কর্ম, অকর্ম ও বিকর্ম সম্বন্ধে সম্বন্ধে যথাযথভাবে জানা কর্তব্য।

শ্লোক  : ১৮ : মানুষের মধ্যে বুদ্ধিমান : 

যিনি কর্মে অকর্ম আর অকর্মে কর্ম দর্শন করেন তিনিই বুদ্ধিমান। 

তিনি কর্মে লিপ্ত থাকলেও চিন্ময় স্তরে অধিষ্ঠিত।

শ্লোক : ১৯ : পূর্ণ জ্ঞানে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি : 

যাঁর সমস্ত কর্ম প্রচেষ্ঠা কাম ও সংকল্প রহিত

জ্ঞানীদের মতে, তার সমস্ত কর্ম প্রতিক্রিয়া পরিশুদ্ধ জ্ঞানাগ্নি দ্বারা দগ্ধ হয়েছে।

শ্লোক : ২০ : তিনি কর্ম ফলের আশায় কিছুই করেন না :   

যিনি কর্মফলের আসক্তি সম্পূর্ণ ত্যাগ করে সর্বদা তৃপ্ত

কোন রকম আশ্রয়ের অপেক্ষা করেন না

সব রকম কর্মে যুক্ত কিন্তু ফলের আশা করেন না

শ্লোক : ২১ : জ্ঞানী ব্যক্তি যেভাবে কর্ম করেন : 

মন ও বুদ্ধিকে সর্বতোভাবে সংযত করে কার্য করেন

প্রভুত্ব করার প্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে কেবল জীবন ধারণের জন্য কর্ম করেন

কোন রকম পাপ তাকে স্পর্শ করতে পারে না।

শ্লোক : ২২ : যিনি ফলের দ্বারা কখনো আবদ্ধ হন না : 

অনায়াসে লব্ধ বস্তু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন

সুখ-দুঃখ, রাগ-দ্বেষ, আদি দ্বন্দ্বের বশীভূত হন না

মাৎসর্যশূন্য

সাফল্যে ও অসাফল্যে অবিচলিত থাকেন

তিনি কর্ম করলেও কর্মের দ্বারা আবদ্ধ হন না।

শ্লোক : ২৩ : যার কর্ম সম্পূর্ণরূপে লয় প্রাপ্ত হয় : 

জড়া প্রকৃতির গুণের প্রভাব মুক্ত হয়ে

চিন্ময় জ্ঞাননিষ্ঠ ব্যক্তি যজ্ঞের উদ্দেশ্যে কৃত কর্ম

শ্লোক : ২৪ : কৃষ্ণভাবনায় মগ্ন ব্যক্তির কার্যকলাপ হচ্ছে চিন্ময় : 

তিনি চিৎ জগতে উন্নীত হবেন

কারণ তার সমস্ত কার্যকলাপ চিন্ময়

কর্মের উদ্দেশ্য হচ্ছে চিন্ময়

সেই উদ্দেশ্যে যা নিবেদন করেন, তাও চিন্ময়






এই লেসন থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, কর্মফলের আশা ত্যাগ করে চিন্ময় উদ্দেশ্যে আমাদের কার্য করতে হবে। 
























চতুর্থ অধ্যায় :        লেসন   :    ৪           :   যজ্ঞ চিন্মর জ্ঞানের দিকে পরিচালিত করে (২৫-৩৩)


এক নজরে দেখুন এবং     স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন  


শ্লোক : ২৫ : বিবিধ প্রকার যজ্ঞ : 

দেবতাদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞের মাধ্যমে তাদের উপাসনা

ব্রহ্মরূপ অগ্নিতে সবকিছু নিবেদনের মাধ্যমে যজ্ঞ

শ্লোক : ২৬ : ব্রহ্মচারী  ও গৃহস্থের যজ্ঞ : 

ব্রহ্মচারী : মনসংযমরূপ অগ্নিতে শ্রবণ আদি ইন্দ্রিয়গুলিকে আহুতি

গৃহস্থ : শব্দাদি ইন্দ্রিয়বিষয়গুলিকে ইন্দ্রিয়রূপ অগ্নিতে আহুতি

শ্লোক : ২৭ : ইন্দ্রিয়াদি সংযমের মাধ্যমে আত্মজ্ঞান লাভের প্রয়াসীদের যজ্ঞ :

তারা সমস্ত ইন্দ্রিয়ের কার্যকলাপ ও প্রাণবায়ু জ্ঞানের দ্বারা প্রদীপ্ত আত্মসংযমরূপ অগ্নিতে আহুতি দেন

শ্লোক : ২৮ : বিভিন্ন প্রকার যজ্ঞ : 

দ্রব্য দানরূপ যজ্ঞ : কঠোর ব্রত গ্রহণ করে

তপস্যারূপ যজ্ঞ :

অষ্টাঙ্গযোগরূপ যজ্ঞ : 

বেদ অধ্যয়ন রূপ যজ্ঞ : পারমার্থিক জ্ঞান লাভের জন্য

শ্লোক : ২৯ : প্রাণায়ামকারী যোগীদের আহুতি :  

প্রাণ বায়ুকে অপান বায়ুতে, অপান বায়ুকে প্রাণবায়ুতে আহুতি

অবশেষে প্রাণ ও অপান বায়ুর গতি রোধ করে সমাধিস্থ হন

কেউ আহার সংযম করে প্রাণবায়ুকে প্রাণবায়ুতেই আহুতি দেন

শ্লোক : ৩০ : উপরোল্লিখিত সকলেই যজ্ঞতত্ত্ববিৎ : 

যজ্ঞের প্রভাবে পাপ থেকে মুক্ত হয়

যজ্ঞাবশিষ্ঠ অমৃত আস্বাদন করে

তারপর সনাতন প্রকৃতিতে ফিরে যান

শ্লোক : ৩১ : যজ্ঞ অনুষ্ঠান না করলে : 

এ জগতে কেউ সুখী হতে পারবে না

তাহলে পরলোকে সুখ প্রাপ্তি কি করে সম্ভব


শ্লোক : ৩২ : যজ্ঞকে যথাযথভাবে জানার মাধ্যমে মুক্তিলাভ : 

সমস্ত যজ্ঞ শাস্ত্রোনুমোদিত

এবং তা বিভিন্ন প্রকার কর্মজাত

শ্লোক : ৩৩ : যজ্ঞের শ্রেষ্ঠতা : 

দ্রব্যময় যজ্ঞ থেকে জ্ঞানময় যজ্ঞ শ্রেয় 

সমস্ত কর্মই পূর্ণরূপে চিন্ময় জ্ঞানে পরিসমাপ্তি লাভ করে।


 


সংযোগ :  (যে চিন্ময় জ্ঞানে সমস্ত কর্মই পরিসমাপ্তি লাভ করে ভগবান এই লেসনে সেই “চিন্ময় জ্ঞানের সারাংশ” প্রদান করবেন।)



চতুর্থ অধ্যয় :          লেসন :    ৫        :      চিন্ময় জ্ঞানের সারাংশ   (৩৪-৪২)


এক নজরে দেখুন এবং     স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন


শ্লোক : ৩৪ : চিন্ময় জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়া :  

সদ্গুরুর শরণাগতি

বিন¤্র প্রশ্ন জিজ্ঞাসা

অকৃত্রিম সেবা দ্বারা সন্তুষ্ট করা

শ্লোক : ৩৫ : জ্ঞান লাভের ফলে আর মোহগ্রস্থ হবে না : 

এই জ্ঞানের দ্বারা তুমি দর্শন করবে যে,

সমস্ত জীব আমার বিভিন্ন অংশ

তারা সকলেই আমার এবং তারা আমাতে অবস্থিত

শ্লোক : ৩৬ : এই জ্ঞানের দ্বারা দুঃখ-সমুদ্র পার : 

সবচেয়ে পাপিষ্ঠ হলেও এই জ্ঞানের দ্বারা দুঃখসমুদ্র পার হতে পারবে।

শ্লোক : ৩৭ : জ্ঞানাগ্নি সমস্ত কর্মকে দগ্ধ করে : 

উদা: প্রজ্¦লিত অগ্নি যেমন কাষ্ঠকে ভস্মসাৎ করে।

শ্লোক : ৩৮ : এই জগতে চিন্ময় জ্ঞানের মতো পবিত্র আর কিছু নেই : 

এটি সমস্ত যোগের পরিপক্ক ফল

ভগবদ্ভক্তি অনুশীলনের মাধ্যমে যিনি তা লাভ করেছেন, তিনি কালক্রমে আত্মায় পরা শান্তি লাভ করেন।

শ্লোক : ৩৯ : কে এই জ্ঞান লাভ করতে পারে : 

সংযতেন্দ্রিয় ও তৎপর

চিন্ময় তত্ত্বজ্ঞানে শ্রদ্ধাবান

তা লাভ করে অচিরেই পরা শান্তি প্রাপ্ত হন

শ্লোক : ৪০ : যারা ভগবদ্ভক্তি লাভ করতে পারে ন া : 

অজ্ঞ ও শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তি

সন্দিগ্ধ চিত্ত ব্যক্তি ইহ ও পরলোকে সুখভোগ করতে পারে না।

শ্লোক : ৪১ : যাকে কোন কর্মই আবদ্ধ করতে পারে না : 

যিনি নিষ্কাম কর্মযোগের দ্বারা কর্মত্যাগ করেন

জ্ঞানের দ্বারা সংশয় নাশ করেন

আত্মার চিন্ময় স্বরূপ অবগত হন

শ্লোক : ৪২ : অজ্ঞানপ্রসূত সংশয়, জ্ঞান রূপ খড়গের দ্বারা ছিন্ন কর, যোগাশ্রয় করে যুদ্ধের জন্য উঠে দাড়াও।









প্রশ্ন : এই জ্ঞান লাভের জন্য কয়টি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় ও কি কি  ? 





প্রশ্ন : কেন এই জ্ঞান জানলে আর কেউ মোহগ্রস্থ হবে না ? 






প্রশ্ন : কে আমাদের সমস্ত কর্মকে দগ্ধ করতে পারে ? 





প্রশ্ন :  কে এই চিন্ময় জ্ঞান লাভ করতে পারে  ?





প্রশ্ন : কে ভগবদ্ভক্তি লাভ করতে পারে না? 






প্রশ্ন : কাকে কোন কর্ম আবদ্ধ করতে পারে না ? 






প ম অধ্যায় : কর্মসন্ন্যাস যোগ  

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১. কর্মযোগ ও কর্মত্যাগ সমান কিন্তু কর্মত্যাগ থেকে কর্মযোগ সহজতর 

(১-৬)

২. কিভাবে কর্ম যোগ অনুষ্ঠান করতে হয়

(৭-১২)

৩. আত্মা, পরমাত্মা ও প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক

(১৩-১৬)

৪. পরমাত্মায় চেতনাকে নিবিষ্ট করার মাধ্যমে মুক্তি 

(১৭-২৯)









প ম অধ্যায় :    লেসন :   ১   :    কর্মযোগ ও কর্মত্যাগ সমান কিন্তু কর্মত্যাগ থেকে কর্মযোগ সহজতর (১-৬)


এক নজরে দেখুন  এবং      স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন


শ্লোক : ১ : অর্জুনের সংশয় : 

প্রথমে কর্ম ত্যাগ করতে বললে

এরপর কর্ম যোগের অনুষ্ঠান করতে বললে

দুটির মধ্যে কোনটি অধিক কল্যাণকর, সুনিশ্চিতভাবে বল।

শ্লোক : ২ : ভগবানের উত্তর : 

কর্মত্যাগ ও কর্মযোগ উভয়েই মুক্তিদায়ক

কর্মযোগ কর্মসন্ন্যাস থেকে শ্রেয়

শ্লোক : ৩ : নিত্য সন্ন্যাসী : 

কর্মফলের প্রতি দ্বেষ বা আকাক্সক্ষা করেন না, দ্বন্দ্বরহিত 

তাই পরম সুখে কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হন।

শ্লোক : ৪ : অল্পজ্ঞ ব্যক্তিদের ধারণা : 

কর্মযোগ ও সাংখ্যযোগকে পৃথক বলে

কিন্তু উভয়ের মধ্যে যেকোন একটি সুষ্ঠুরুপে আচরণ করলে উভয়ের ফল লাভ হয়।

শ্লোক : ৫ :  যথার্থ দ্রষ্টা : 

সাংখ্যযোগ ও কর্মযোগে একই গতি লাভ হয়

তিনিই যথার্থ তত্ত্বদ্রষ্টা, যিনি সাংখ্যযোগ ও কর্মযোগকে এক বলে জানেন।

শ্লোক : ৬ : কেবল কর্মত্যাগরূপ সন্ন্যাস দুঃখজনক : 

কর্মযোগ ব্যতীত কেবল কর্মত্যাগরূপ সন্ন্যাস দুঃখজনক

যোগযুক্ত মুনি অচিরেই ব্রহ্মকে লাভ করেন




বি : দ্র : অর্থ্যাৎ এই সেকশনের সারাংশ হচ্ছে কর্ম না করে কর্মত্যাগের চিন্তা করা যাবে না। আরো সিদ্ধান্ত হয় যে কর্মত্যাগের চেয়ে কর্মযোগই আমাদের জন্য উত্তম এবং এর দ্বারা আমরা অচিরেই ব্রহ্মকে লাভ করতে পারব। 










প ম অধ্যায় :       লেসন :  ২   :      কিভাবে কর্মযোগ অনুষ্ঠান করতে হয় (৭-১২)


এক নজরে দেখুন       এবং গল্পটি স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন। 


শ্লোক : ৭ : যোগযুক্ত জ্ঞানী কর্ম করেও কর্মে লিপ্ত হন না : 

যোগযুক্ত জ্ঞানী বিশুদ্ধ বুদ্ধি, বিশুদ্ধ চিত্ত ও জিতেন্দ্রিয়

তিনি সমস্ত জীবের অনুরাগ ভজন।

শ্লোক : ৮-৯ : চিন্ময় চেতনায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তির মনোভাব : 

 দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শ, ঘ্রাণ, ভোজন, গমন, নিদ্রা ও নিঃশ^াস আদি ক্রিয়া করেও জানেন যে, তিনি কিছুই করছেন না

কারণ প্রলাপ, ত্যাগ, গ্রহণ, চক্ষুর উন্মেষ ও নিমেষ করার সময় তিনি জানেন যে, জড় ইন্দ্রিয়গুলিই কেবল ইন্দ্রিয়ের বিষয়ে প্রবৃত্ত হয়েছে।

শ্লোক : ১০ : যিনি কর্মফল ভগবানে অর্পণ করে অনাসক্ত হয়ে কর্ম করেন : 

 কোন পাপ তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না

 উদা: পদ্মপাতাকে জল স্পর্শ করতে পারে না

শ্লোক : ১১ : আত্ম-শুদ্ধির জন্য কর্ম : 

 আত্ম-শুদ্ধির জন্য কর্মফলের আসক্তি ত্যাগ করে 

দেহ, মন ও বুদ্ধি এমনকি ইন্দ্রিয়ের দ্বারাও কর্ম করেন

শ্লোক : ১২ : কর্মফলত্যাগী যোগী ও সকাম কর্মীর গতি : 

 কর্মফল ত্যাগী যোগী নৈষ্ঠিকী শান্তি লাভ করেন

সকাম কর্মী কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ হন


বি : দ্র : এই লেসন থেকে আমরা শিখলাম যে,  আমাদের কর্মফল ভগবানকে অর্পন করে কর্ম সম্পাদন করতে হবে, অর্থ্যাৎ চাকরী করতে হবে আর বেতনের সব অর্থ কৃষ্ণের জন্য ব্যয় করবে। যারা সব পারবে না তার নির্ধারিত অংশ জগন্নাথের সেবার জন্য ব্যয় করবে । তাহলে সেই ব্যক্তি তিনি ধীরে ধীরে নৈষ্ঠিকী শান্তি লাভ করেন। 

কর্মফল ত্যাগ করতে হবে বা ভগবানকে অর্পণ করতে হবে তা নাহলে কর্মবন্ধনে জড়িয়ে পড়তে হবে। 














প ম অধ্যায় :      লেসন :  ৩  :       আত্মা, পরমাত্মা ও প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক  (১৩-১৬)

এক নজরে দেখুন এবং গল্পটি স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন


শ্লোক : ১৩-১৪ : আত্মা বা জীবের সাথে জড়া প্রকৃতির সম্পর্ক :: 

বাহ্যে সমস্ত কার্য করেন

মনের দ্বারা সমস্ত কর্ম ত্যাগ করেন

নিজে কিছু করেন না 

কাউকে দিয়ে কিছু করান না 

নবদ্বার বিশিষ্ট দেহে পরম সুখে বাস করেন

জীব কর্ম সৃষ্টি করে না 

সে কাউকে দিয়ে কিছু করায় না 

সে কর্মের ফলও সৃষ্টি করে না 

এই সব হয় জড়া প্রকৃতির গুণের প্রভাবে


শ্লোক : ১৫ : জীবের পাপ ও পুণ্য এর সাথে ভগবানের সম্পর্ক  : 

জীবের পাপ ও পুণ্য ভগবান গ্রহণ করেন না

অজ্ঞানের দ্বারা প্রকৃত জ্ঞান আবৃত হওয়ায় জীব মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে

শ্লোক : ১৬ : যাদের কাছে পরমতত্ত্বের প্রকাশ হয় : 

জ্ঞানের প্রভাবে যাদের অজ্ঞান বিনষ্ট হয়েছে

সেই জ্ঞান অপ্রাকৃত পরমতত্ত্বকে প্রকাশ করে 

উদা: দিনের বেলা সূর্যের উদয়ে সবকিছু প্রকাশিত হয়






















প ম অধ্যায় :    লেসন :   ৪ :   পরমাত্মায় চেতনাকে নিবিষ্ট করার মাধ্যমে মুক্তি (১৭-২৯)    

এক নজরে দেখুন এবং   গল্পটি স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন :


শ্লোক : ১৭ : যিনি জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত : 

যাঁর বুদ্ধি ভগবানের প্রতি উন্মুখ হয়েছে

মন ভগবানের চিন্তায় একাগ্র হয়েছে

নিষ্ঠা ভগবানে দৃঢ় হয়েছে

ভগবানকে একমাত্র আশ্রয় বলে গ্রহণ করেছেন

জ্ঞানের দ্বারা তাঁর সমস্ত কলুষ বিধৌত হয়েছে

শ্লোক : ১৮ : জ্ঞানবান পন্ডিতেরা সমদর্শী হন : 

বিদ্যা-বিনয়সম্পন্ন ব্রাহ্মণ

গাভী, হস্তী, কুকুর ও চন্ডাল সকলের প্রতি সমদর্শী 

শ্লোক : ১৯ : সমদর্শী ব্যক্তির অবস্থা : 

ইহলোকেই জন্ম ও মৃত্যুর সংসার জয় করেছেন

ব্রহ্মের মতো নির্দোষ, এবং তাঁরা ব্রহ্মে অবস্থিত

শ্লোক : ২০-২১ :  কে ব্রহ্মে অবস্থিত : 

প্রিয় বস্তুর প্রাপ্তিতে উৎফুল্ল হন না

অপ্রিয় বস্তুর প্রাপ্তিতে বিচলিত হন না

স্থিরবুদ্ধি, মোহশূন্য ও ভগবৎ তত্ত্ববেত্তা 

কোন রকম জড় ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের প্রতি আকৃষ্ট হন না

তিনি চিদ্গত সুখ লাভ করেন

ব্রহ্মে যোগযুক্ত হয়ে তিনি অক্ষয় সুখ ভোগ করেন 

শ্লোক : ২২ : ইন্দ্রিয়জাত বিষয়সুখ ভোগ : 

বিবেকবান পুরুষ দুঃখের কারণ জেনে তাতে আসক্ত হন না

এই ধরণের সুখভোগ আদি ও অন্ত বিশিষ্ঠ 

তাই জ্ঞানী ব্যক্তি তাতে প্রীতি লাভ করেন না

শ্লোক : ২৩ : কে যোগী, কে এজগতে সুখী হন : 

যে এই দেহ ত্যাগ করার পূর্বে কাম ও ক্রোধ থেকে উদ্ভূত বেগ সহ্য করতে পারেন

শ্লোক : ২৪-২৬ : কে ব্রহ্মনির্বাণ লাভ করেন : 

যিনি আত্মাতেই সুখ অনুভব করে

আত্মাতেই ক্রীড়া যুক্ত এবং আত্মায় যাঁর লক্ষ্য

তিনি ব্রহ্মে অবস্থিত হয়ে ব্রহ্মনির্বাণ লাভ করেন

সংযতচিত্ত, সমস্ত জীবের কল্যাণে রত এবং সংশয় রহিত নিষ্পাপ ঋষিগণ 

কাম-ক্রোধশূন্য, সংযতচিত্ত, আত্মতত্ত্বজ্ঞ সন্ন্যাসীরা

শ্লোক :  ২৭-২৮ : কে নিশ্চিতভাবে মুক্ত : 

মন থেকে বাহ্য ইন্দ্রিয়ের বিষয় প্রত্যাহার

ভ্রু-যুগলের মধ্যে দৃষ্টি স্থির করে নাসিকার মধ্যে বিচরণশীল প্রাণ ও অপান বায়ুর গতি রোধ করে

ইন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধি সংযম করে

ইচ্ছা, ভয় ও ক্রোধশূণ্য হয়ে যে মুনি সর্বদা বিরাজ করে

শ্লোক : ২৯ : কে শান্তি লাভ করেন : 

পরমেশ^র ভগবানকে সমস্ত যজ্ঞ ও তপস্যার পরম ভোক্তা

সর্বলোকের মহেশ^র

সমস্ত জীবের সুহৃদরূপে যিনি জানেন

তিনি জড় জগতের দুঃখ-দূর্দশা থেকে মুক্ত হয়ে শান্তি লাভ করেন










ষষ্ট অধ্যায় : ধ্যান যোগ 

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১. যোগরূরূক্ষ ও যোগারূঢ় অনুশীলন

(১-৯)

২. যোগ অনুশীলনের বিভিন্ন স্তর

(১০-২৭)

৩. যোগের পূর্ণতা : কৃষ্ণকে পরমাত্মারূপে উপলব্ধি

(২৮-৩৬)

৪. ভ্রষ্ট যোগীর গতি

(৩৭-৪৫)

৫. সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী

(৪৬-৪৭)
























ষষ্ঠ অধ্যায় :       লেসন : ১      :      যোগারুরুক্ষ ও যোগারূঢ় অনুশীলন (১-৯)


এক নজরে দেখুন এবং গল্পটি স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন


শ্লোক : ১ :  শ্রীভগবান বললেন :  কে যোগী আর কে যোগী নন : 

যোগী বা সন্ন্যাসী -

যিনি ফলের প্রতি আসক্ত না হয়ে তাঁর কর্তব্যকর্ম করেন

যোগী বা সন্ন্যাসী নন-

অগ্নিহোত্রাদি কর্ম ত্যাগ করেছেন

দৈহিক চেষ্টাশূন্য 

শ্লোক : ২ : কখনই যোগী হওয়া যায় না : 

ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের বাসনা ত্যাগ না করলে কখনোই যোগী হওয়া যায় না

সন্ন্যাস বা যোগ একই অর্থ

শ্লোক : ৩ : যোগারুরুক্ষ ও যোগারুঢ় ব্যক্তির কর্মকৌশল : 

যোগারুরুক্ষ : অষ্টাঙ্গযোগ অনুশীলনে যারা নবীন

তাদের জন্য কর্মানুষ্ঠান করাই উৎকৃষ্ট সাধন

যোগারুঢ় : যারা অষ্টাঙ্গযোগ অনুশীলনে দক্ষ

তাদের জন্য কর্ম থেকেই নিবৃত্তিই উৎকৃষ্ট সাধন

শ্লোক : ৪ : যোগারুঢ় : 

জড় সুখভোগের সমস্ত সংকল্প ত্যাগ করে

ইন্দ্রিয়ভোগ্য বিষয় ও সকাম কর্মের প্রতি আসক্তি রহিত

শ্লোক : ৫-৬ : মন অবস্থাভেদে বন্ধু ও শত্রু : 

মানুষের কর্তব্য মনের দ্বারা নিজেকে জড় জগতের বন্ধন থেকে উদ্ধার করা

মনের দ্বারা আত্মাকে অধঃপতিত করা উচিত নয়। 

যিনি তাঁর মনকে জয় করেছেন, তিনি তাঁর পরম বন্ধু

যিনি জয় করতে অক্ষম, তাঁর মনই তাঁর পরম শত্রু


শ্লোক : ৭ :  জিতেন্দ্রিয় ও প্রশান্তচিত্ত ব্যক্তি : 

তিনি পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে পেরেছেন

শীত ও উষ্ণ, সুখ ও দুঃখ এবং সম্মান ও অপমান সবই সমান

শ্লোক : ৮ : যোগারূঢ় : 

যে যোগী শাস্ত্রজ্ঞান ও তত্ত্ব অনুভূতিতে পরিতৃপ্ত, 

যিনি চিন্ময় স্তরে অধিষ্ঠিত  ও জিতেন্দ্রিয়

যিনি মৃৎখন্ড, প্রস্তর ও সুবর্ণে সমদর্শী 

শ্লোক : ৯ :  কে শ্রেষ্ঠ ? : 

যিনি সুহৃদ, মিত্র, শত্রু, উদাসীন, মধ্যস্থ, মৎসর, 

বন্ধু, ধার্মিক ও পাপাচারী সকলের প্রতি সমদর্শী





ষষ্ঠ অধ্যায় :      লেসন :  ২  :           যোগ অনুশীলনের বিভিন্ন স্তর  ( ১০-২৭)

এক নজরে দেখুন এবং স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন 


শ্লোক : ১০ :  যোগারূঢ় ব্যক্তির অবস্থান : 

সর্বদা পরব্রহ্মে সম্পর্কযুক্ত হয়ে তাঁর দেহ, মন ও নিজেকে নিয়োজিত করবেন

একাকী নির্জন স্থানে বসবাস করবেন

সর্বদা সতর্কভাবে তাঁর মনকে বশীভূত করবেন

বাসনামুক্ত ও পরিগ্রহ রহিত হবেন

শ্লোক : ১১-১২ : যোগ অনুশীলনের স্থান : 

কুশাসনের উপর মৃগচর্মের আসন, তার উপর বস্ত্রাসন

অত্যন্ত উচ্চ বা নীচ নয়, 

পবিত্র স্থানে স্থাপন করতে হবে

সেখানে উপবিষ্ট হয়ে চিত্ত, ইন্দ্রিয় ও ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত করে চিত্ত শুদ্ধির জন্য একমনে যোগাভ্যাস করবেন

শ্লোক : ১৩-১৪ : যোগ অনুশীলনের প্রক্রিয়া : 

শরীর, মস্তক ও গ্রীবাকে সমান রেখে

অন্য দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে, নাসিকার অগ্রভাগে দৃষ্টি রেখে

প্রশাত্মাত্মা, ভয়শূন্য ও ব্রহ্মচর্য-ব্রতে স্থিত হয়ে 

সমস্ত জড় বিষয় থেকে মনকে প্রত্যাহার করে

কৃষ্ণকে জীবনের চরম লক্ষ্যরূপে স্থির করে হৃদয়ে শ্রীকৃষ্ণের ধ্যানপূর্বক যোগাভ্যাস করবেন 

শ্লোক : ১৫ : যোগীর ভগবদ্ধাম প্রাপ্তি : 

এভাবে দেহ, মন ও কার্যলাপ সংযত করার অভ্যাসের ফলে 

যোগীর জড় বন্ধন মুক্ত হয় এবং তিনি ভগবদ্ধাম প্রাপ্ত হন

শ্লোক : ১৬ : যিনি যোগী হতে পারেন না : 

অধিক ভোজনকারী, নিতান্ত অনাহারী

অধিক নিদ্রাপ্রিয় ও নিদ্রাশুন্য ব্যক্তি

শ্লোক : ১৭ : যিনি যোগ অনুশীলনের দ্বারা দুঃখের নিবৃত্তি সাধন করেন : 

যিনি পরিমিত আহার ও বিহার করেন

পরিমিত প্রয়াস করেন

যাঁর নিদ্রা ও জাগরণ নিয়মিত

শ্লোক : ১৮-১৯ : কে যোগযুক্ত : 

যোগী যখন অনুশীলনের দ্বারা চিত্তবৃত্তির নিরোধ করেন

সমস্ত জড় কামনা বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে আত্মাতে অবস্থান করেন

উদা: বায়ুশূন্য স্থানে দ্বীপ শিখার যেমন কম্পমান হয় না তেমনি চিত্তবৃত্তির নিরোধ অভ্যাসকারী যোগীর চিত্তও অবিচলিত থাকে। 

শ্লোক : ২০-২৩ :  যোগ সমাধি স্তর : (যখন যোগ অভ্যাসের ফলে চিত্ত সম্পূর্ণরূপে জড় বিষয় থেকে প্রত্যাহৃত হয়)

আত্মাতেই পরম আনন্দ লাভ করেন

অপ্রাকৃত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অপ্রাকৃত সুখ অনুভূত হয়।

এই চেতনায় যোগী আর আত্ম-তত্ত্বজ্ঞান থেকে বিচলিত হন না

আর কোন কিছু লাভই এর থেকে অধিক বলে মনে হয় না

চরম বিপর্যয়েও চিত্ত বিচলিত হয় না

এটি জড় সংযোগ থেকে প্রকৃত মুক্তি। 

শ্লোক : ২৪-২৫ : যেভাবে অধ্যবসায় করতে হবে : 

অবিচলিত অধ্যবসায় ও বিশ^াস সহকারে

সংকল্পজাত সমস্ত কামনা সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ

মনের দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলিকে সবদিক থেকে নিয়ন্ত্রিত করা কর্তব্য

 ধৈর্য্যযুক্ত বুদ্ধির দ্বারা মনকে ধীরে ধীরে আত্মাতে স্থির করে

অন্য কিছু চিন্তা না করে সমাধিস্থ হতে হয়।

চ ল ও অস্থির মন যে যে বিষয়ে ধাবিত হয়ে তাকে সেখান থেকে নিবৃত্ত করে আত্মার বশে আনতে হবে। 

শ্লোক : ২৭ : যিনি পরম সুখ প্রাপ্ত হন : 

ব্রহ্মভাব সম্পন্ন, প্রশান্ত চিত্ত, রজোগুণ প্রশমিত ও নিষ্পাপ হয়ে 

যার মন আমাতে নিবিষ্ট হয়েছে


ষষ্ঠ অধ্যায় :      লেসন :  ৩  :        যোগের পূর্ণতা :  কৃষ্ণকে পরমাত্মারূপে উপলব্ধি  ( ২৮-৩৫)

এক নজরে দেখুন  :  গল্পটি স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন :


শ্লোক : ২৮ : আত্মসংযমী যোগী সমস্ত কলুষ থেকে মুক্ত হয়ে ব্রহ্ম সংস্পর্শরূপ পরম সুখ আস্বাদন করেন

শ্লোক : ২৯-৩০ : প্রকৃত যোগী/ সর্ব শ্রেষ্ঠ যোগী  : 

সর্বভূতে আমাকে দর্শন করেন (২৮)

আমাতে সব কিছু দর্শন করেন (২৮)

সর্বত্র আমাকে দর্শন করেন (২৮)

তিনি কখনো আমার দৃষ্টির অগোচর হন না (২৯)

আমিও কখনো তার দৃষ্টির অগোচর হই না (২৯)

সর্বভূতে স্থিত পরমাত্মারূপে জেনে আমার ভজনা করেন (৩০)

সর্ব অবস্থাতেই আমাতে অবস্থান করেন (৩০)

শ্লোক : ৩৩-৩৪ : অর্জুন বললেন : মনের চ ল স্থিতি : 

মনের চ ল স্বভাবের কারণে সমদর্শনের স্থায়ী স্থিতি দেখতে পাচ্ছি না (৩৩)

মন অত্যন্ত ” ল, ইন্দ্রিয়াদির বিক্ষেপ উৎপাদক, দুর্দমনীয় এবং অত্যন্ত বলবান, (৩৪) 

তাকে নিগ্রহ করা বায়ুকে বশীভূত করার থেকেও অধিকতর কঠিন বলে মনে করি (৩৪)

শ্লোক : ৩৫-৩৬ : ভগবানের উত্তর : মন নিয়ন্ত্রণের কৌশল : 

মন যে দুর্দমনীয় ও চ ল তাকে কোন সন্দেহ নেই। (৩৫)

ক্রমশ অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা বনকে বশীভূত করা যায়। (৩৫)

অসংযত চিত্ত ব্যক্তির পক্ষে আত্মোপলব্ধি দুষ্প্রাপ্য। (৩৬)

কিন্তু যার মন সংযত এবং মনকে বশে আনতে চেষ্টা করেন, তিনি অবশ্যই সিদ্ধি লাভ করবেন। (৩৬)


ষষ্ঠ অধ্যায় :      লেসন :  ৪  :    ভ্রষ্ট যোগীর গতি (৩৭-৪৫)

এক নজরে দেখুন : 


শ্লোক : ৩৭-৩৮ : অর্জুন জিজ্ঞাসা করছেন : ভ্রষ্ট যোগীর গতি সম্বন্ধে  : 

যিনি প্রথমে শ্রদ্ধা সহকারে যোগে যুক্ত থাকেন এবং চিত্তচা ল্য হেতু সিদ্ধিলাভ করতে পারেন না তার কি গতি (৩৭)

সে কি ছিন্ন মেঘের মতো একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে ? (৩৮)

তুমিই কেবল আমার সংশয় দূর করতে পারবে  (৩৯)

শ্লোক : ৪০-৪৬ : ভগবান উত্তর প্রদান করছেন :

শুভানুষ্ঠানকারী পরমার্থবিদের ইহলোকে ও পরলোকে কোন দুর্গতি হয় না, কল্যাণকারীর কখনও অধোগতি হয় না (৪০)

পূণ্যবানদের প্রাপ্য স্বর্গাদি লোকে বহুকাল বাস করে (৪১)

সদাচারী ব্রাহ্মণের গৃহে অথবা ধনী বণিকের গৃহে জন্মগ্রহণ করে (৪১)

অথবা জ্ঞানবান যোগীগণের বংশে জন্মগ্রহণ করেন। (৪২)

এই প্রকার জন্ম এই জগতে দুর্লভ (৪২)

সেই প্রকার জন্মের ফলে পূর্ব জন্মকৃত পারমার্থিক চেতনার বুদ্ধিসংযোগ লাভ করে পুনরায় সিদ্ধি লাভের জন্য যতœবান হন। (৪৩)

তিনি যেন অবশ হয়ে যোগ সাধনের প্রতি আকৃষ্ট হন (৪৪)

এভাবে তিনি সকাম কর্ম মার্গ থেকে উৎকৃষ্ট ফল লাভ করেন (৪৫)

পূর্বের জন্মকৃত যতœ অপেক্ষা অধিক যতœ করে পাপ মুক্ত হয়ে পরম গতি লাভ করেন। (৪৬)

শ্লোক : ৪৭-৪৮ : শ্রেষ্ঠ যোগী : 







সপ্তম অধ্যায়  :  বিজ্ঞান যোগ

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১. কৃষ্ণ সম্বন্ধে শ্রবণের মাধ্যমে তাঁকে পূর্ণরূপে জানা

(১-৭)

২. কৃষ্ণকে জড় ও চিন্ময় উভয় শক্তির উৎস হিসেবে জানা

(৮-১২)

৩. জড়া প্রকৃতির তিনটি গুণ কৃষ্ণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই শরণাগতি

(১৩-১৪)

৪. চার ধরণের ব্যক্তি-শরণাগত হয়/ শরণাগত হয় না

(১৫-১৯)

৫. দেব উপাসক ও নির্বিশেষবাদী, যারা ভুল স্থানে শরণাগত হয়

(২০-২৫)

৬. বদ্ধ জীবের মোহগ্রস্থ অবস্থা এবং কৃষ্ণের জ্ঞান লাভের দ্বারা মুক্তি

(২৬-৩০)



প্রথম বিভাগ : কৃষ্ণ সম্বন্ধে শ্রবণের মাধ্যমে তাঁকে  পূর্ণরূপে জানা (১-৭)

শ্লোক ১-৭ : 

কিভাবে আসক্তচিত্ত হয়ে, আমাতে মনোনিবেশ করে যোগাভ্যাস করলে সংশয় থেকে মুক্ত হয়ে আমাকে জানতে পারবে তা শ্রবণ কর। (১)

সেই বিজ্ঞান সম্বন্ধে ভগবান বলবেন, যা জানলে এই জগতে আর কিছুই জানার বাকি থাকে না। (২)

হাজার হাজারের মধ্যে একজন সিদ্ধি লাভের প্রয়াসী/ যতœশীল সিদ্ধদের মধ্যে একজন ভগবানের ভগবৎ স্বরূপকে তত্ত্বত অবগত  হন। (৩)

জড়া প্রকৃতি : ভূমি, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহংকার। (৪)

উৎকৃষ্টা/ পরা প্রকৃতি : চৈতন্যস্বরূপা ও জীবভূতা, যার থেকে সমস্ত জীব নিঃসৃত হয়েছে। (৫)

ভগবান বললেন তাঁর এই উভয় প্রকৃতি থেকে জড় ও চেতন সবকিছু উৎপন্ন হয়েছে। নিশ্চিত ভাবে জেনে রেখো আমি সমস্ত জগতের উৎপত্তি ও প্রলয়ের মূল কারণ। (৬)

ভগবান কৃষ্ণ থেকে শ্রেষ্ট আর কেউ নেই, সমস্ত বিশ^ আমাতে ওতপ্রোতভাবে অবস্থান করে। উদা : সূত্রে যেমন মণিসমূহ গাথাঁ থাকে। (৭)


শ্লোক ৮-১২ : কৃষ্ণকে জড় ও চিন্ময় উভয় শক্তির উৎস হিসেবে জানা : 

জলের রস, চন্দ্র ও সূর্যের প্রভা, সর্ব বেদের প্রণব, আকাশের শব্দ, মানুষের পৌরুষ। (৮)

জলের রস

বলবানের বল ও কাম বিবর্জিত বল

চন্দ্র ও সূর্যের প্রভা

ধর্মের অবিরোধী কাম

সর্ব বেদের প্রণব

সর্বভূতের জীবন

আকাশের শব্দ

তপস্বীদের তপ

মানুষের পৌরুষ

সর্বভূতের সনাতন কারণ

পৃথিবীর পবিত্র গন্ধ

বুদ্ধিমানের বুদ্ধি

অগ্নির তেজ

তেজস্বীদের তেজ

সমস্ত সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক ভাব আমার থেকেই উৎপন্ন।

আমি সেই সকলের অধীন নয়, কিন্তু তারা আমার শক্তির অধীন। 



শ্লোক ১৩-১৪ : জড়া প্রকৃতির ত্রিগুন কৃষ্ণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই  তাঁর শরণাগত হওয়া উচিত : 

ত্রিগুণের দ্বারা মোহিত বলে সমস্ত গুণের অতীত ও অব্যয় আমাকে জানতে পারে না (১৩)

আমার দৈবী মায়া ত্রিগুণাত্মিকা এবং দুরতিক্রমনীয়া (১৪)

কিন্তু যাঁরা আমাতে প্রপত্তি করেন, তাঁরা এই মায়া উত্তীর্ণ হতে পারে (১৪)


শ্লোক ১৫-১৯ : চার ধরণের ব্যক্তি যারা ভগবানের উপাসনা করে এবং যারা করে না : 

যারা ভগবানের উপাসনা করে না : (১৫)

মূঢ়, নরাধম, মায়াপহৃতজ্ঞানা, আসুরিক ভাবসম্পন্ন

যারা ভজনা করেন : (১৬)

আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু, জ্ঞানী

এই চার প্রকারের মধ্যে জ্ঞানী শ্রেষ্ঠ। (আমি তাঁর অত্যন্ত প্রিয়, তিনিও আমার অত্যন্ত প্রিয়) (১৭)

সকলেই নিঃসন্দেহে মহাত্মা, কিন্তু জ্ঞানী আমার আত্মস্বরূপ (১৮)

আমার অপ্রাকৃত সেবায় যুক্ত থেকে তিনি সর্বোত্তম গতি স্বরূপ আমাকে লাভ করেন (১৮)

মহাত্মা দূর্লভ : বহুজন্মের পর তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তি আমাকে সর্বকারণের পরম কারণ জেনে আমার শরণাগত হয়। (১৯)


শ্লোক ২০-২৬ : দেব উপাসক ও নির্বিশেষবাদীরা ভুল স্থানে শরণাগত হয় : 

জড় কামনা-বাসনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দেব-দেবীর শরণাগত হয় (২০)

স্বীয় স্বভাব অনুসারে বিশেষ নিয়ম পালন করে উপাসনা করে (২০)

দেবতাদের পূজার জন্য আমি তাদের অচলা শ্রদ্ধা বিধান করি (২১)

সেই দেবতার কাছ থেকে আমারই দ্বারা কাম্য বস্তু অবশ্যই লাভ করেন (২২)


অষ্টম অধ্যায় :  অক্ষর ব্রহ্মযোগ

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১. অর্জুনের প্রশ্ন-কৃষ্ণের উত্তর 

(১-৪)

২. কৃষ্ণ স্মরণ

(৫-৯)

৩. যোগামিশ্র ভক্তি

(১০-১৩)

৪. শুদ্ধ ভক্তিমূলক সেবা

(১৪-১৬)

৫. জড় ও চিন্ময় জগতের মধ্যে তুলনা

(১৭-২২)

৬. পরমতত্ত্বকে লাভ করার জন্য ভক্তির শ্রেষ্ঠতা

(২৩-২৮)




অষ্টম অধ্যায় :  লেসন : ১  :         অর্জুনের প্রশ্ন ও কৃষ্ণের উত্তর (১-৪) 

গল্পটি স্মরণ রাখুন 


 শ্লোক : ১-৪ :  অর্জুনের প্রশ্ন : 

ব্রহ্ম কি ? অধ্যাত্ম কি ? কর্ম কি?  অধিভূত কি ? অধিদৈব কাকে বলে? (১)

এই দেহে অধিযজ্ঞ কে ? তিনি কিরূপে দেহে অবস্থিত ? মৃত্যুকালে জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তিরা কিভাবে তোমাকে জানতে পারে ?  (২)

             :  ভগবানের উত্তর : 

নিত্য বিনাশ রহিত জীবকে ব্রহ্ম বলে (৩)

আর তার নিত্য স্বভাবকে অধ্যাত্ম বলে (৩)

ভূতগণের উৎপত্তি ও বৃদ্ধিকর সংসারই কর্ম (৩)

নশ^র জড়া প্রকৃতি হচ্ছে অধিভূত (৪)

সূর্য, চন্দ্র আদি সমস্ত দেবতাদের সমষ্টিরূপ বিরাট পুরুষকে অধিদৈব বলে (৪)

দেহীদের দেহান্তরগত অন্তর্যামীরূপে আমিই অধিযজ্ঞ (৪)

শ্লোক : ৫-৯ : কৃষ্ণ স্মরণের ফল : 

মৃত্যুকালে যিনি আমাকে স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন, তিনি তৎক্ষণাৎ আমার ভাবই প্রাপ্ত হন। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই (৫)

অন্তিমকালে যিনি যে ভাব স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন, তিনি সেই ভাবে ভাবিত তত্ত্বকেই লাভ করেন। (৬)

সর্বদা আমাকে স্মরণ করে স্বভাব বিহিত যুদ্ধ কর (৭)

তাহলে আমাতে তোমার মন ও বুদ্ধি অর্পিত হবে এবং নিঃসন্দেহে তুমি আমাকেই লাভ করবে (৭)

অভ্যাসযোগে যুক্ত হয়ে অনন্যগামী চিত্তে যিনি অনুক্ষণ পরম পুরুষের চিন্তা করে, অবশ্যই তাঁকে প্রাপ্ত হবেন। (৮)

ভগবানের ধ্যান করা উচিত : সর্বজ্ঞ, সনাতন, নিয়ন্তা, সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর, সকলের বিধাতা, জড় বুদ্ধির অতীত, অচিন্ত্য ও পুরুষরুপে। (৯)

তিনি সূর্যের মতো জ্যোতির্ময় এবং জড়া প্রকৃতির অতীত। (৯)

শ্লোক : ১০-১৩ : যোগামিশ্রা ভক্তি : 

যিনি মৃত্যুর সময় অচ ল চিত্তে, ভক্তি সহকারে, পূর্ণ যোগশক্তির বলে ভ্রুযুগলের মধ্যে প্রাণবায়ুকে স্থাপন করে পরমেশ^র ভগবানকে স্মরণ করেন, তিনি অবশ্যই সেই দিব্য পুরুষকে প্রাপ্ত হন (১০)

সংক্ষেপে তাঁর সম্বন্ধে বলব : (১১)

বেদবিৎ পন্ডিতেরা যাকে ‘অক্ষর’ বলে জানেন

বিষয় আসক্তিশূন্য সন্ন্যাসীরা যাতে প্রবেশ করেন

ব্রহ্মচারীরা যাঁকে লাভ করার ইচ্ছায় ব্রহ্মচর্য পালন করেন

যেভাবে যোগে স্থিত হতে হয় : (১২)

ইন্দ্রিয়ের সব কটি দ্বার সংযত করে, 

মনকে হৃদয়ে নিরোধ করে

ভ্রুদ্বয়ের মধ্যে প্রাণ স্থান করে

যিনি পরমা গতি লাভ করেন : (১৩)

যোগাভ্যাসে পবিত্র ওঙ্কার উচ্চারণ করতে করতে 

কেউ যদি পরমেশ^র ভগবানকে স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন

শ্লোক : ১৪-১৬ : শুদ্ধ ভক্তিমূলক সেবা : 

ভগবান যার কাছে সুলভ হন : (১৪)

যিনি একাগ্র চিত্তে কেবল নিরন্তর আমাকেই স্মরণ করেন।

মহাত্মা, যোগীগণ আমাকে লাভ করে আর এই দুঃখপূর্ণ নশ^র সংসারে জন্মগ্রহণ করেন না (১৫)

কেননা তারা পরম সিদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছেন (১৫)

এই ভুবন থেকে ব্রহ্মলোক পর্যন্ত সমস্ত লোকই পুনরাবর্তনশীল, কিন্তু আমাকে প্রাপ্ত হলে আর পুনর্জন্ম হয় না (১৬)

শ্লোক : ১৭-২২ : চিন্ময় ও জড় জগতের তুলনা : 

দিবা রাত্রির তত্ত্ববেত্তা : (১৭)

মনুষ্য মানের সহ¯্রযুগে ব্রহ্মার একদিন হয়

সহ¯্র যুগে তাঁর এক রাত্রি হয়, এভাবে যাঁরা জানেন

ব্রহ্মার দিনে সব জীব অব্যক্ত থেকে অভিব্যক্ত হয় এবং রাত্রিতে পুনরায় অব্যক্তে লয় প্রাপ্ত হয়। (১৮)

এভাবে রাত্রিতে লয় প্রাপ্ত হয় এবং পুনরায় দিনের আগমনে তারা আপনা থেকে প্রকাশিত হয়। (১৯)

অব্যক্ত প্রকৃতি : (২০)

যা নিত্য, ব্যক্ত ও অব্যক্ত বস্তুর অতীত (২০)

সমস্ত ভূত বিনষ্ট হলেও তা বিনষ্ট হয় না (২০)

তাকে অক্ষর বলে তা সমস্ত জীবের পরমা গতি (২১)

কেউ সেখানে গেলে তাকে আর এই জগতে ফিরে আসতে হয় না (২১)

সেটিই আমার পরম ধাম (২১)

ভগবানকে লাভের পন্থা : 

অনন্যা ভক্তির মাধ্যমেই কেবল লাভ করা যায় (২২)

তিনি তাঁর ধামে নিত্য বিরাজমান, তবুও সর্বব্যাপ্ত, এবং সব কিছুই তার মধ্যেই অবস্থিত (২২)


শ্লোক : ২৩-২৮ : পরমতত্ত্বকে লাভ করার জন্য ভক্তির শ্রেষ্ঠতা :

যে কালে মৃত্যু হলে যোগীরা এই জগতে ফিরে আসেন অথবা আসেন না : 

ব্রহ্মবিদ পুরুষগণ : অগ্নি, জ্যোতি, শুভদিন, শুক্লপক্ষে ও ছয় মাস উত্তরায়ণ কালে দেহ ত্যাগ করলে ব্রহ্ম লাভ করেন।  (২৪)

ধূম, রাত্রি, কৃষ্ণপক্ষ অথবা দক্ষিণায়ণের ছয় মাস কালে দেহত্যাগ করে চন্দ্রলোকে সুখভোগ করার পর পুনরায় মর্ত্যলোকে প্রত্যাবর্তন করেন। (২৫)

শুক্লমার্গে দেহত্যাগ করলে আর ফিরে আসতে হয় না (২৬)

কৃষ্ণমার্গে দেহত্যাগ করলে ফিরে আসতে হয় (২৬)

ভক্তরা এই দুটি মার্গ সম্বন্ধে জেনে কখনো মোহগ্রস্থ হবে না (২৭)

ভক্তিযোগে কোন ফলেই বি ত হবে না। 

বেদপাঠ, যজ্ঞ অনুষ্ঠান, তপস্যা, দান আদি যত প্রকার জ্ঞান ও কর্ম আছে, সেই সমুদয়ের যে ফল, তা তুমি ভক্তিযোগ দ্বারা লাভ করে আদি ও পরম ফল প্রাপ্ত হও। (২৮)








নবম অধ্যায় : রাজগুহ্য যোগ

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১. কৃষ্ণ সম্বন্ধে শ্রবণের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা 

(১-৩)

২. জড় জগতের সাথে কৃষ্ণের অচিন্ত্য সম্পর্ক

(৪-১০)

৩. যারা কৃষ্ণের উপাসনা করে এবং করে না

(১১-১৯)

৪. দেব উপাসক ও ভক্তদের মধ্যে পার্থক্য

(২০-২৬)

৫. সরাসরি কৃষ্ণ উপাসনার মহিমা

(২৭-৩৪)




দশম অধ্যায় : বিভূতি যোগ

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১. কৃষ্ণ সব কিছুর উৎস 

(১-৭)

২. চতুশ্লোকী গীতা

(৮-১১)

৩. অর্জুনের ভগবানকে স্বীকার এবং তাঁর অনুরোধ

(১২-১৮)

৪. কৃষ্ণের ঐশ^র্যসমূহ

(১৯-৪২)



একাদশ অধ্যায়  : বিশ^রূপ দর্শন যোগ

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১. অর্জুনের অনুরোধে কৃষ্ণের বিশ^রূপের বর্ণনা 

(১-৮)

২. সঞ্জয়ের বিশ^রূপের বর্ণনা

(৯-৩১)

৩. শুধুমাত্র একজন ক্রীড়নক হওয়ার জন্য কৃষ্ণের নির্দেশ দিলেন

(৩২-৩৪)

৪. অর্জুনের প্রার্থনা

(৩৫-৪৬)

৫. শুধুমাত্র শুদ্ধ ভক্তরাই কৃষ্ণের দ্বিভুজ রূপ দর্শন করতে পারেন

(৪৭-৫৫)






লেসন : ১      অর্জুনের অনুরোধে কৃষ্ণের বিশ^রূপের বর্ণনা (১-৮)


শ্লোক ১-৮ :  

অর্জুন উবাচ : তোমার গুহ্য উপদেশ শ্রবণ করে আমার মোহ দূর হয়েছে (১)

সর্বভূতের উৎপত্তি ও প্রলয় তোমার থেকেই হয়, আমি তা অবগত হলাম (২)

আমি তোমার ঐশ^র্যময় রূপ দেখতে ইচ্ছা করি। (৩)

আমাকে যোগ্য মনে করলে সে নিত্যস্বরূপ দেখাও । (৪)

ভগবান উবাচ : আমার বিভিন্ন দিব্যরুপ সমূহ দর্শন কর, অদৃষ্টপূর্ব আশ্চর্য রূপ দেখ, যা দেখতে ইচ্ছা কর তাই দেখ। (৫-৭)

দিব্য চক্ষু দান । (৮)


লেসন-২  :     সঞ্জয় কর্তৃক বিশ^রূপের বর্ণনা :  (৯-৩১)

বিশ^রূপের ধরণ : (১০-১১)

সহ¯্র সূর্যের প্রভা বিশ^রুপের প্রভার কিি ৎ তুল্য হতে পারে (১২)

অর্জুন বিস্মিত ও রোমাি ত হলেন এবং করজোড়ে বলতে লাগলেন : (১৪) 

অর্জুন বিশ^রূপে যা দেখলেন (১৫-৩০)

অর্জুন সেই বিশ^রুপ প্রণাম করে শান্ত হতে বললেন এবং প্রসন্ন হতে বললেন । বিশেষ ভাবে সেই সম্বন্ধে জানতে চাইলেন। (৩১)







লেসন-৩ :     শুধুমাত্র একজন ক্রীড়নক হওয়ার জন্য কৃষ্ণের নির্দেশ   (৩২-৩৪)


ভগবান উবাচ : কৃষ্ণ কর্তৃক বিশেষভাবে পরিচয় প্রদান  (৩২)

আমি লোকক্ষয়কারী প্রবৃদ্ধ কাল

লোক সংহার করতে প্রবৃত্ত হয়েছি

তোমরা (পান্ডবরা) ছাড়া উভয় পক্ষের যোদ্ধারা নিহত হবে

তুমি নিমিত্তমাত্র হও  (৩৩) 

তুমি যুদ্ধ করার জন্য উত্থিত হও

যশ লাভ কর

শত্রুদের পরাজিত কর, সমৃদ্ধশালী রাজ্য ভোগ কর

আমার দ্বারা এরা পূর্বেই নিহত হয়েছে

যুদ্ধ কর (৩৪)

সমস্ত বীরগণ পূর্বেই আমার দ্বারা নিহত হয়েছে

তাদের বধ কর এবং বিচলিত হয়ো না

তুমি নিশ্চয়ই শত্রুদের জয় করবে


লেসন-৪ :   অর্জুনের প্রার্থনা (৩৫-৪৬)


অর্জুন কৃতাঞ্জলীপুটে প্রণাম করে গদগদ বাক্যে শ্রীকৃষ্ণকে বলতে লাগলেন : (৩৫)

 তোমার মহিমা কীর্তনে সমস্ত জগৎ প্রহৃষ্ট হয়ে তোমার প্রতি অনুরক্ত হয়েছে।

রাক্ষসরা ভয়ে পলায়ন করছে এবং সিদ্ধরা নমষ্কার করছে। (৩৬)

তুমি ব্রহ্মা থেকেও শ্রেষ্ঠ আদি সৃষ্টিকর্তা

তুমি সৎ ও অসৎ উভয়ের অতীত অক্ষরতত্ত্ব ব্রহ্ম (৩৭)

তুমি আদি দেব, পুরাণ পুরুষ এবং বিশে^র পরম আশ্রয় 

তুমি জ্ঞাতা, জ্ঞেয় এবং গুণাতীত পরম ধামস্বরূপ। 

এই জগত তোমার দ্বারা পরিব্যাপ্ত (৩৮)

তুমি, বায়ু, অগ্নি, যম, বরুন, চন্দ্র, প্রজাপতি ও প্রপিতামহ। সহ¯্রবার, পুনরায় এবং বারবার প্রণাম করি (৩৯)

সম্মুখে ও পশ্চাতে এবং সমস্ত দিক থেকে নমষ্কার করছি।

তুমি অনন্তবীর্য, বিক্রমশালী, এবং সর্ব-স্বরূপ। (৪০)

৪১-৪৪// অর্জুনের ক্ষমা প্রার্থনা : অনুপযুক্ত সম্বোধন, প্রমাদবশত আচরণ ও অসম্মান প্রদর্শনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (৪১-৪২)

তুমি চরাচর জগতের পিতা, পূজ্য, গুরু ও গুরুশ্রেষ্ঠ, ত্রিভুবনে তোমার সমান কেউ নেই (৪৩)

পিতা যেমন পুত্রের, সখা যেমন সখার, প্রেমিক যেমন প্রিয়ার অপরাধ ক্ষমা করেন, সেভাবে তুমিও আমার অপরাধ ক্ষমা করতে সমর্থ্য। (৪৪)

বিশ^রূপ দেখে আনন্দিত ও ভীত হয়েছি, চতুর্ভূজ মূর্তি দর্শনাভিলাষী (৪৫-৪৬)


 লেসন-৫ :     শুধুমাত্র কৃষ্ণভক্তরাই দ্বিভুজ রূপ দর্শন করতে পারেন (৪৭-৫৫)


ভগবান উবাচ : তোমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে অন্তরঙ্গা শক্তি দ্বারা জড় জগতের অন্তর্গত শ্রেষ্ঠ রূপ দেখালাম। তুমি ছাড়া পূর্বে কেউ এই অনন্ত, আদি ও তেজোময় রূপ দেখেনি। (৪৭)

বেদ অধ্যয়ন, যজ্ঞ, দান, পুণ্যকর্ম ও কঠোর তপস্যার দ্বারা তুমি ছাড়া আর কেউ এই রূপ দর্শন করতে সমর্থ নয়।(৪৮)

এই রূপ দেখে তুমি ব্যথিত ও মোহাচ্ছন্ন হয়ো না।(৪৯)

চতুর্ভুজ ও দ্বিভুজ রূপ দেখালেন । ( ৫০)

অর্জুন উবাচ :  সৌম্য মূর্তি দর্শন করে চিত্ত স্থির ও প্রকৃতিস্থ হলাম । (৫১)

ভগবান উবাচ : আমার দ্বিভুজ অত্যন্ত দুর্লভ দর্শন। দেবতারাও যাঁর দর্শনাকাক্সক্ষী। (৫২)

দিব্য চক্ষুর দ্বারা যেরূপ দর্শন করছ, তা বেদ অধ্যয়ন, তপস্যা, দান ও পূজার দ্বারা কেউই দর্শন করতে সমর্থ নয়। (৫৩)

 কেবল অনন্য ভক্তির দ্বারাই আমাকে তত্ত্বত জানতে, প্রত্যক্ষ করতে এবং আমার চিন্ময় ধামে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। (৫৪)

যিনি আমার অকৈতব সেবা করেন, নিষ্ঠাপরায়ণ, আমার ভক্ত, জড় বিষয়ে আসক্তি রহিত এবং সমস্ত প্রাণীর প্রতি শত্রুভাব রহিত, তিনিই আমাকে লাভ করেন। (৫৫)



দ্বাাদশ অধ্যায়  : ভক্তি যোগ

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১. নির্বিশেষবাদের উপরে ভক্তি 

(১-৭)

২. ভক্তির ক্রমোন্নতির স্তর

(৮-১২)

৩. ভক্তের যে সমস্ত গুণ কৃষ্ণের প্রিয়

(১৩-২০)














     

ত্রয়োদশ অধ্যায়  : প্রকৃত পুরুষ বিবেক যোগ

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১) ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞ

(১-৭)

২) জ্ঞানের প্রক্রিয়া

(৮-১২)

৩) জ্ঞানের লক্ষ্য

(১৩-১৯)

৪) প্রকৃতি, পুরুষ ও তাদের মিলন

(২০-২৬)

৫) জ্ঞান চক্ষুষা

(২৭-৩৫)






চতুর্দশ অধ্যায়  : গুণত্রয় বিভাগ যোগ

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১) ত্রিগুণের প্রভাব

(১-৯)

২) ত্রিগুণের বৈশিষ্ট্য, কার্য এবং মৃত্যু

(১০-১৮)

৩) ত্রিগুণকে অতিক্রম

(১৯-২৭)
















প দশ অধ্যায় : পুরুষোত্তম যোগ 

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১) জড় জগতের প্রতি নিরাসক্ত হওয়া

(১-৫)

২) বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন

(৬-১১)

৩) কৃষ্ণ যেভাবে প্রতিপালন করেন

(১২-১৫)

৪) বেদান্ত সূত্রের সারাংশ

(১৬-২০)










লেসন : ১ : জড় জগতের প্রতি নিরাসক্ত হওয়া  (১-৫)

 উর্দ্ধমূল ও অধঃশাখাবিশিষ্ট বৃক্ষ : 

বেদজ্ঞ ব্যক্তি : উর্দ্ধমূল ও অধঃশাখা বিশিষ্ট বৃক্ষ ও বৈদিক মন্ত্রসমূহ তার পত্রস্বরূপ। এই বৃক্ষকে যিনি জানের তিনি বেদজ্ঞ  (১)

শাখাসমূহ ত্রিগুণের দ্বারা পুষ্ট হয়ে উভয় দিকে বিস্তৃত। ইন্দ্রিয় বিষয়সমূহ পল্লবেন ন্যায়। 

মূল অধঃদেশে প্রসারিত এবং সেগুলি মনুষ্যলোকে সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ। (২)


বৃক্ষের মূল ছেদন : 

বৃক্ষের স্বরূপ এই জগতে উপলব্ধ হয় না

এর আদি অন্ত ও স্থিতি কোথায় তা কেউই বুঝতে পারে না।

তীব্র বৈরাগ্যরূপ অস্ত্রের দ্বারা তার মূল ছেদন আবশ্যক।

সত্য বস্তুর অন্বেষণ করা কর্তব্য, যেখানে গেলে আর ফিরে আসতে হয় না

সমস্ত কিছুর প্রবর্তক ও যাঁর থেকে সব কিছুর বিস্তৃত হয়েছে, তার শরণাগত হতে হবে। (৩-৪)

যিনি সেই অব্যয় পদ লাভ করেন : 

যিনি অভিমান ও মোহশূন্য, সঙ্গদোষ রহিত, নিত্য ও অনিত্য বিচার পরায়ণ,

কামনা-বাসনা বর্জিত, সুখ-দুঃখ আদি দ্বন্দ্বসমূহ থেকে মুক্ত ও মোহমুক্ত। (৫)


লেসন : ২ : বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন (৬-১১)

ভগবদ্ধামের বর্ণনা : 

সূর্য, চন্দ্র, অগ্নি বা বিদ্যুৎ সেই ধামকে আলোকিত করতে পারে না।

 সেখানে গেলে আর এই জগতে ফিরে আসতে হয় না। (৬)

জীবের এই জগতে সংগ্রাম : 

ভগবানের সনাতন বিভিন্নাংশ হওয়া সত্ত্বেও  ত্রিগুণের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে,

মন সহ ছয়টি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রকৃতিরূপ ক্ষেত্রে কঠোর সংগ্রাম করছে। (৭)

দেহান্তরের সময় :

এক শরীর থেকে অন্য শরীরে যাওয়ার সময় জীবনের বিভিন্ন ধারণাগুলি নিয়ে যায় । 

উদা: বায়ু যেমন ফুলের গন্ধ নিয়ে যায়। (৮)

চক্ষু, কর্ণ, ত্বক, জিহ্বা, নাসিকা ও মনকে আশ্রয় করে ইন্দ্রিয়ের বিষয়সমূহ উপভোগ করে। (৯)

মূঢ় লোকেরা এই পরিবর্তন দর্শন করতে পারে না

কিন্তু জ্ঞান চক্ষুবিশিষ্ট ব্যক্তি সমস্ত বিষয় দেখতে পান। (১০)

আত্মজ্ঞানে অধিষ্ঠিত যতœশীল যোগীগণ এই তত্ত্ব দর্শন করতে পারেন। 

আত্মতত্ত্বজ্ঞানরহিত অবিবেকীগণ যতœপরায়ণ হয়েও এই তত্ত্ব অবগত হতে পারে না। (১১)

লেসন : ৩ : কৃষ্ণ যেভাবে প্রতিপালন করেন  (১২-১৫)

কৃষ্ণ যে ভাবে প্রতিপালন করেন : 

সূর্যের, চন্দ্রের ও অগ্নির যে জ্যোতি সমগ্র জগতকে উদ্ভাসিত করে তা কৃষ্ণের তেজ। (১২)

আমি পৃথিবীতে প্রবিষ্ট হয়ে আমার শক্তির দ্বারা সমস্ত জীবদের ধারণ করি

রসাত্মক চন্দ্ররূপে ধান, যব ও আদি ওষধি পুষ্ট করছি। (১৩)

জঠরাগ্নিরূপে প্রাণ ও অপান বায়ুর সংযোগে চার প্রকার খাদ্য পরিপাক করি। (১৪)

আমি সমস্ত জীবের হৃদয়ে অবস্থান করি, 

আমার থেকেই স্মৃতি, জ্ঞান ও বিস্মৃতি হয়।

আমিই সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য এবং বেদান্তকর্তা ও বেদবিৎ । (১৫)


লেসন : ৪ : বেদান্তসূত্রের সারাংশ (১৬-২০)

ক্ষর ও অক্ষর  : 

এই জগতের সমস্ত জীবকে ক্ষর 

চিৎ জগতের সমস্ত জীবকে অক্ষর বলে।(১৬)

এই উভয় থেকে ভিন্ন উত্তম পুরুষকে বলা হয় পরমাত্মা, যিনি ঈশ^র ও অব্যয় এবং ত্রিজগতের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে পালন করছেন। (১৭)

কৃষ্ণ ক্ষরের অতীত এবং অক্ষর থেকেও উত্তম, তাই জগতে ও বেদে তিনি পুরুষোত্তম নামে বিখ্যাত । (১৮)

যিনি নিঃসন্দেহে তাঁকে পুরুষোত্তম বলে জানেন,  তিনি সর্বজ্ঞ এবং সর্বতোভাবে কৃষ্ণের ভজনা করেন। (১৯)

এভাবে সবচেয়ে গোপনীয় শাস্ত্র আমি তোমার কাছে প্রকাশ করলাম । যে এটা জানে সে প্রকৃত বুদ্ধিমান ও কৃতার্থ হন। (২০)


ষোড়শ অধ্যায় : দৈবাসুরসম্পদ যোগ 

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

১) দৈবী ও আসুরিক গুণাবলী 

(১-৯)

২) আসুরিক স্বভাব

(১০-১৮)

৩) আসুরিক কার্যকলাপের ফল ও উর্দ্ধগতি না অধোগতি তার নির্বাচন ?

(১৯-২৪)















লেসন : ১ : দৈবী ও আসুরিক গুণাবলী (১-৯) : 

 দৈবী গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের গুণাবলী : 

ভয়শূন্যতা, সত্তার পবিত্রতা, পারমার্থিক জ্ঞানের অনুশীলন, দান, আত্ম-সংযম, যজ্ঞ অনুষ্ঠান, বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন, তপশ্চর্যা, সরলতা, অহিংসা, সত্যবাদিতা, ক্রোধশূন্যতা, বৈরাগ্য, শান্তি, অন্যের দোষ দর্শন না করা, সমস্ত জীবে দয়া, লোভহীনতা, মৃদুতা, লজ্জা, অচপলতা, তেজ, ক্ষমা, ধৈর্য, শৌচ, মাৎসর্যশূন্যতা, অভিমানশূন্যতা।  (১-৩)

অসুর স্বভাবসম্পন্ন ব্যক্তিদের গুণাবলী : 

দম্ভ, দর্প, অভিমান, ক্রোধ, রূঢ়তা ও অবিবেকী । (৪)

তারা ধর্ম বিষয়ে প্রবৃত্ত ও অধর্ম বিষয়ে নিবৃত্ত হতে জানে না । 

এবং তাদের মধ্যে শৌচ, সদাচার ও সত্যতা বিদ্যমান নেই। (৭)

দৈবী সম্পদ মুক্তির অনুকূল আর আসুরিক সম্পদ বন্ধনের কারণ (৫)

ভগবদ্ধামে প্রবেশের যোগ্যতা : 

ভক্তির দ্বারা ভগবানকে স্বরূপত জানতে পারা যায়।

ভক্তির দ্বারা ভগবানকে তত্ত্বত জেনে তাঁর ধামে প্রবেশ করা যায় । (৬)

জগত সৃষ্টি সম্বন্ধে অসুরস্বভাব ব্যক্তির ধারণা : 

এই জগৎ মিথ্যা, অবলম্বনহীন ও ঈশ^রশূন্য।

কামবশত এই জগত উৎপন্ন হয়েছে এবং কাম ছাড়া আর কোন কারণ নেই। (৮)

আত্মতত্ত্ব-জ্ঞানহীন, অল্প-বুদ্ধিসম্পন্ন, উগ্রকর্মা ও অনিষ্টকারী অসুরেরা জগৎ ধ্বংসকারী কার্যে প্রভাব বিস্তার করে। (৯)


লেসন : ২ : আসুরিক ব্যক্তিদের স্বভাব (১০-১৮) : 

অসুর গুণাবলীসম্পন্ন ব্যক্তিদের স্বভাব : 

দুষ্পূরণীয় কামকে আশ্রয় করে।

দম্ভ, মান ও মদমত্ত হয়ে অশুচি কার্যে ব্রতী হয়।

মোহবশত অসৎ বিষয়ে প্রবৃত্ত হয়। (১০)

অপরিমেয় দুশ্চিন্তার আশ্রয় করে মৃত্যুকাল পর্যন্ত ইন্দ্রিয়সুখ ভোগকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। 

শত শত আশাপাশে আবদ্ধ হয়ে, কাম ও ক্রোধ-পরায়ণ হয়ে অসৎ উপায়ে অর্থ স য়ের চেষ্টা করে। (১১-১২)

তাদের মনোভাব : 

আজ আমার দ্বারা এত লাভ হয়েছে, 

এবং পরিকল্পনা অনুসারে আরো লাভ হবে। 

আমার এত ধন আছে, ভবিষ্যতে আরো ধন লাভ হবে। 

ঐ শত্রু আমার দ্বারা নিহত হয়েছে, অন্যান্য শত্রুদেরও আমি হত্যা করব।

আমিই ঈশ^র, আমিই ভোক্তা।

আমিই সিদ্ধ, বলবান ও সুখী। 

আমি সবচেয়ে ধনবান এবং অভিজাত আত্মীয়-স্বজন পরিবৃত।

আমার মতো আর কেউ নেই। 

আমি যজ্ঞ অনুষ্ঠান করব, দান করব এবং আনন্দ করব।  

এভাবে অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা অজ্ঞানের দ্বারা বিমোহিত।

দুশ্চিন্তায় বিভ্রান্ত হয়ে এবং মোহজালে বিজড়িত হয়ে , কামভোগে আসক্ত চিত্ত সেই ব্যক্তিরা অশুচি নরকে পতিত হয়। (১৩-১৬)

আসুরিক ব্যক্তিদের যজ্ঞ : 

তারা আত্মভিমানী, অন¤্র এবং ধন এবং মানে মদান্বিত ব্যক্তিরা অবিধিপূর্বক দম্ভ সহকারে নামমাত্র যজ্ঞ করে। (১৭)

অহঙ্কার, বল, দর্প, কাম ও ক্রোধকে আশ্রয় করে স্বীয় দেহে ও পরদেহে অবস্থিত পরমেশ^রস্বরূপ আমাকে দ্বেষ করে 

সাধুদের গুণেতে দোষারোপ করে। (১৮)


লেসন : ৩ : আসুরিক কার্যকলাপের ফল, উর্দ্ধগতি বা অধোগতি, কোনটি পছন্দ ? (১৯-২৪) 

আসুরিক লোকদের গতি : 



সপ্তদশ অধ্যায় : শ্রদ্ধাত্রয়বিভাগ যোগ 

বিভাগ

শ্লোক বিভাজন

শ্লোক সংখ্যা

১) ত্রিগুণে শ্রদ্ধা, পূজা ও খাদ্য

(১-১০)

১০

২) ত্রিগুণে যজ্ঞ, তপস্যা এবং দান

(১১-২২)

১২

৩) ওঁ তৎ সৎ  জপের মাধ্যমে কার্যাবলীর পরিশোধন

(২৩-২৮)









লেসন : ১  :    ত্রিগুণে শ্রদ্ধা, পূজা ও খাদ্য :      (১-১০)

শ্রদ্ধা : 

সকলের শ্রদ্ধা নিজ নিজ অন্তঃকরণের অনুরূপ হয়।

যে যে গুণের প্রতি শ্রদ্ধাযুক্ত, সে সেই রকম শ্রদ্ধাবান। 

পূজা : 

সাত্ত্বিক ব্যক্তিরা দেবতাদের পূজা করে

রাজসিক ব্যক্তিরা যক্ষ ও রাক্ষসদের পূজা করে

তামসিক ব্যক্তিরা ভূত ও প্রেতাত্মাদের পূজা করে (৪)

খাদ্য : 

সাত্ত্বিক আহার : আয়ু, সত্ত্ব, বল, আরোগ্য, সুখ ও প্রীতি বর্ধনকারী এবং রসযুক্ত, ¯িœগ্ধ, স্থায়ী ও মনোরম।

রাজসিক আহার : অতি তিক্ত, অতি অম্ল, অতি লবণাক্ত, অতি উষ্ণ, অতি তীক্ষ্ম, অতি শুষ্ক, অতি প্রদাহকর এবং দুঃখ, শোক ও রোগপ্রদ । 

তামসিক আহার : আহারের তিন ঘন্টা পূর্বে রান্না করা, নীরস, দুগর্ন্ধযুক্ত, বাসী এবং অপরের উচ্ছিষ্ট দ্রব্য ও অমেধ্য দ্রব্য। (৮,৯,১০)

যজ্ঞ : 

সাত্ত্বিক যজ্ঞ : ফলের বাসনা না করে, শাস্ত্রের বিধি অনুসারে, অনুষ্ঠান করা কর্তব্য মনে করে, মনের একাগ্রতা সহকারে যে যজ্ঞ করা হয়। (১১)

রাজসিক যজ্ঞ : ফল কামনা করে, দম্ভ প্রকাশের জন্য, যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়।

তামসিক যজ্ঞ : শাস্ত্রবিধি বর্জিত, প্রসাদান্ন বিতরণহীন, মন্ত্রহীন, দক্ষিণাবিহীন ও শ্রদ্ধাবিহিন যজ্ঞকে। (১৩)

তপস্যা :